ডেস্ক রিপোর্ট
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!ইতালিয়ান শব্দ ‘Grafitiato’ থেকে ‘গ্রাফিতি’ শব্দের সৃষ্টি। যার অর্থ ‘খচিত’। জনসাধারণের অভিমত শৈল্পিক উপায়ে দেয়ালের ওপরে লেখনী কিংবা অঙ্কনের মাধ্যমে তুলে ধরাকেই গ্রাফিতি বলে। গ্রাফিতি সাধারণত বিনা অনুমতিতে আঁকা হয়। সিম্পল কনটেন্ট থাকবে, সিম্পল আঁকা থাকবে, কিন্তু পেছনের বোধটা থাকবে খুব গভীর। সহজ ভাষায় এটাই গ্রাফিতি।
গ্রাফিতি তৈরির উপকরণ হিসেবে সাধারণত ব্যবহার করা হয় স্প্রে, পেইন্ট বা মার্কার পেন। দেখতে সাধারণ কোনো চিত্রকর্ম বা দেয়াল লিখন মনে হলেও গ্রাফিতিতে শিল্পীর সূক্ষ্ম বার্তা লুকানো থাকে। দেশে দেশে সামাজিক অবিচার, সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা যুদ্ধের বিরুদ্ধে শিল্পীরা গ্রাফিতির মাধ্যমে তাদের বার্তা সমাজে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। শান্তির পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান ফুটে ওঠে কোনো কোনো দেয়ালচিত্রে। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপাত্মক চিত্রের মাধ্যমে সমাজের বাস্তবতাও শিল্পী তার তুলির আঁচড়ে নিখুঁতভাবে তুলে আনেন। এই গ্রাফিতির ইতিহাস আসলে বহু পুরোনো। ইতিহাসেরও আগের। গুহাবাসীদের সময় থেকেই। অনুমান করা হয়, গ্রাফিতি প্রথম অঙ্কন করা হয়েছিল গুহার দেয়ালে পশুর হাড় দিয়ে খোদাই করে। মানবসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাফিতিও বিকশিত হয়েছে, বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। গ্রাফিতি হয়ে উঠেছে সাধারণ চিত্রকর্ম থেকে প্রতিবাদের ভাষা।
প্রাচীন গ্রিস ও রোমান সাম্রাজ্যের সময়কাল থেকে মূলত এই গ্রাফিতির প্রচলন ভালো করে শুরু হয়। তুরস্কের প্রাচীন নগরী এফেসাসে আধুনিক গ্রাফিতির উদ্ভব। তবে তখন এগুলো ভালো চোখে দেখা হতো না। কারণ সেখানে গ্রাফিতি পতিতাবৃত্তির বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হতো। সেসময় গ্রাফিতিতে প্রায়ই প্রেম, রাজনৈতিক স্লোগান এবং জনপ্রিয় উদ্ধৃতি লেখা হতো। ইতালির রোম ও পম্পেই নগরীর সমাধিস্থলের দেয়াল ও ধ্বংসাবশেষে গ্রাফিতির অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। দক্ষিণ সিরিয়া, পূর্ব জর্ডান এবং উত্তর সৌদি আরবে শিলা ও পাথরের ওপর কিছু লেখা পাওয়া গেছে স্যাফাইটিক ভাষায় এবং ধারণা করা হয় এই স্যাফাইটিক ভাষার উৎপত্তি গ্রাফিতি থেকে।
গ্রাফিতি একটি বিতর্কিত বিষয়। অধিকাংশ দেশে গ্রাফিতিকে বিকৃত ও ধ্বংসাত্মক শিল্প হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ অনেক সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের সক্রিয়তা গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রচার করে। মার্কিন শিল্পী জেন মিচেল বাস্কুইয়াটের গ্রাফিতি জনসাধারণের মনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। তার তৈরি একটি গ্রাফিতি ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছিল।
বর্তমান সমাজের চেয়ে প্রাচীন সমাজের গ্রাফিতিগুলো আরও বেশি অর্থপূর্ণ এবং ভিন্ন ভিন্ন ধারায় বহমান ছিল। প্রাচীন গ্রাফিতিগুলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটাত। ভিসুভিয়াস অগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময়কার গ্রাফিতিগুলো পম্পেই নগরীতে সংরক্ষিত ছিল। নভেলিয়া প্রিমিগেনিয়া নামের এক পরমা সুন্দরী পতিতার ব্যাপারে জানা যায় গ্রাফিতি থেকে।
গ্রাফিতির ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশেও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিত্র ও শিক্ষার্থীদের ত্যাগ স্মরণ করতে সারা দেশের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হচ্ছে গ্রাফিতি। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছেন এই কাজে। ছাত্র আন্দোলনে জড়িতদের ত্যাগ মানুষের মাঝে স্মরণীয় রাখতেই এ উদ্যোগ। গ্রাফিতিতে রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশের গল্প ও আন্দোলন অভ্যুত্থানের নানা ঘটনা।