ডেস্ক রিপোর্ট
বাকু জলবায়ু সম্মেলনে সেই ‘থ্রি জিরো বা তিন শূন্য’ তত্ত্বকেই বড় করে তুলে ধরলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি যে তত্ত্ব নিয়ে এতদিন কথা বলে আসছিলেন, আজ বুধবার সম্মেলনে নিজের ভাষণে এই তত্ত্বের উপস্থাপনা করে বলেন, এটাই এক নতুন সভ্যতার জন্ম দেবে। গড়ে তুলবে এক নতুন পৃথিবী, যা সবার জন্য বাসযোগ্য হবে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ–২৯-এর ওয়ার্ল্ড লিডার্স ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের সবাইকে শুধু এমন এক জীবনশৈলী গ্রহণ করতে হবে, যা এই পৃথিবীকে সবার জন্য নিরাপদ করে তুলবে।
বাংলাদেশে আগস্ট বিপ্লবের পর থেকে মুহাম্মদ ইউনূস যুবসমাজের ক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা বড় করে তুলে ধরছেন। নতুন প্রজন্মের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখার কথা সর্বত্র বলে চলেছেন। এই বিশ্বাস তাঁর অনেক দিনের। বাকুর জলবায়ু সম্মেলনে নিজের ভাষণেও তিনি বিশ্বের যুবশক্তির প্রতি সেই বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করে ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের উল্লেখ করে সবাইকে তাঁর স্বপ্নের সঙ্গী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই তিনটি ক্ষেত্র অর্জন করতে পারলে বাকি কাজটুকু করে ফেলবে আজকের নতুন প্রজন্ম। তারা তাদের পৃথিবীকে ভালোবাসে।
পৃথিবীকে দূষণমুক্ত করা ও বাসযোগ্য করে তুলতে তিনি যে অনেকের চেয়ে একটু অন্যভাবে ভাবেন, সে কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বহুদিনের সেই স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তন ক্রমেই খারাপ হয়ে চলেছে। আমাদের সভ্যতা প্রবল ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেহেতু আমরা নিজেদের মূল্যবোধগুলো ক্রমাগত ধ্বংস করে চলেছি। এ থেকে পরিত্রাণে আমাদের বুদ্ধি, অর্থ ও যুবশক্তিকে একত্র করতে হবে, যাতে এক নতুন সভ্যতা গড়ে ওঠে। সে জন্য আমাদের গ্রহণ করতে হবে এক নতুন ধাঁচের জীবন, যাতে এক নতুন পৃথিবীর জন্ম হয়।’
কী সেই নতুন সভ্যতা সংক্ষেপে তার রূপরেখা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের জীবনশৈলী পরিবেশবিরুদ্ধ। সেই জীবনধারার পক্ষে আমরা যে যুক্তি খাড়া করি, তা অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর ভিত্তিশীল। সেই অর্থনৈতিক কাঠামো ভোগবাদী জীবনশৈলী গড়ে তুলেছে। লক্ষ্য ভোগবাদের প্রচার। যত বেশি ভোগ, তত বৃদ্ধি। যত বৃদ্ধি, তত সম্পদেরও বৃদ্ধি। লাভের শেষসীমায় পৌঁছানোই যেন হয়ে উঠেছে আজকের জীবনের একমাত্র ব্রত।’
নতুন সভ্যতা গড়ে উঠবে এক নতুন সংস্কৃতিতে ভর দিয়ে। সেই পাল্টা সংস্কৃতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের শূন্য বর্জ্য বা শূন্য অপচয়ের পথে হাঁটতে হবে। অপচয় বন্ধের অর্থ ভোগ কমানো। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়তি ভোগ্যপণ্য ব্যবহৃত না হলে অপচয় কমে যাবে। নতুন সেই জীবনশৈলীর ভিত হবে শূন্য কার্বন, জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে বিকল্প ও নবায়নযোগ্য শক্তি।’ তিনি বলেন, পরিবেশের নিরাপত্তার জন্যই দরকার এই নতুন জীবনধারা বা ‘লাইফস্টাইল’। সেই যাপন চাপিয়ে দেওয়া হবে না। তা পছন্দ করতে হবে। যুব সম্প্রদায় তা আনন্দের সঙ্গে ভালোবেসে গ্রহণ করবে। এভাবে যুবাসমাজের প্রত্যেকে গড়ে উঠবে ‘থ্রি জিরো পারসন’ হিসেবে।
‘থ্রি জিরো পারসন’ কেমন, তা নির্দিষ্ট করে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সে কার্বন নিঃসরণ করবে না। অর্থাৎ সে হবে ‘জিরো কার্বন’। সে সম্পদের একক মজুতদার হবে না। তার সম্পদ হবে সামাজিক ব্যবসাভিত্তিক। অর্থাৎ সে হবে ‘জিরো দারিদ্র্য’ এবং এভাবেই তারা প্রত্যেকে উদ্যোগী হয়ে পূরণ করবে ‘জিরো বেকারত্বের’ তৃতীয় শর্ত। অর্থাৎ মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বণ নিঃসরণ শূন্যে নামাতে পারলে দুশ্চিন্তামুক্ত ও বাসযোগ্য এক নতুন পৃথিবী গড়ে উঠবে।
বাকুতে মূল সম্মেলনের বাইরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার দেখা করেন স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা ও ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে। বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পক্ষে তিনি তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।