ডেস্ক রিপোর্ট
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আরিফুর রহমান। বাজেট বক্তৃতা কখনো পুরোটাই শোনা হয়নি তাঁর। তবে বাজেটের দিন একটি বিষয়ে চোখ বুলাতে ভুল হয় না। পণ্য ও সেবার খরচ কোথায় বাড়বে কিংবা কোথায় কমবে, বাজেটে তাঁর জানার বিষয় এই একটাই। এ বিষয়ে চোখ বুলাতে গিয়ে স্বস্তি পেয়েছেন খুব সামান্যই। অস্বস্তিই ছিল বেশি। কারণ, বাজেটে শুল্ককর কমেছে, এমন পণ্যের সংখ্যা এবার নগণ্য।
আব্দুল আজিজ বলেন, পাঁচজনের সংসার চালাতে গিয়ে দুই বছর ধরে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিত্যপণ্য ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যে খরচ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবার আশা ছিল, বাজেটে হয়তো কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে। তবে বাজেটের দিন হতাশ হতে হয়েছে বেশি।
বাজেটে গুঁড়া দুধ, বিদেশি পোশাক, ল্যাপটপ, পানি শোধন যন্ত্র, ডেঙ্গুর কিটের মতো বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক কমানো হয়েছে। এ তালিকায় আজিজের জন্য গুঁড়া দুধ ছাড়া আর কিছুই নেই। তা–ও বাজেটে তিনটি এইচএসকোডের আওতায় গুঁড়া দুধ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এবারের বাজেটে দাম বাড়তে পারে, এমন তালিকাটা লম্বা। আজিজ দেখলেন, সেখানে তাঁকে স্পর্শ করবে অনেক কিছুই। যেমন ছুটির দিনে শিশুবাচ্চাকে নিয়ে বিনোদন পার্কে ঘুরতে যান তিনি। সেখানে এখন ঘুরতে গেলে খরচ বাড়বে। গরমে আইসক্রিম খেতে চাইলে সেখানেও বাড়তি টাকা দিতে হবে। ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে পুরোনো বাজেট পাল্টে ফেলতে হবে তাকে।
বাজেটে ফ্রিজের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। আজিজের ঘরে ফ্রিজ আছে। ফলে দাম বাড়লেও আপাতত বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে না। তবে এবার যে গরম পড়েছে, তাতে এসি কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু বাজেটে দেশে তৈরি এসির ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। তাতে আজিজের এসি কেনার পরিকল্পনা আরও পেছাল।
দাম বাড়ার লম্বা তালিকায় আজিজ একটু স্বস্তি খুঁজে পেয়েছেন। যেমন বাজেটে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যস্তর বাড়ানোর প্রস্তাবে খুশি হয়েছেন তিনি। কারণ, আরিফুর ধূমপায়ী নন। আবার ধনীদের জমা টাকায় আবগারি শুল্ক বাড়ায় খুশি হয়েছেন তিনি। করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ায় খুব অস্বস্তি নেই তাঁর।
মুঠোফোনে অনেক কথাই হলো আব্দুল আজিজের সঙ্গে। এরপর নিজে থেকেই জানালেন, ‘এখন তো বেশি কথাও আর বলা যাবে না।’ আরিফুরের কথাই ঠিক। বাজেটে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাতে কথা বলার খরচ বেড়েছে। কারণ, অর্থমন্ত্রী মুঠোফোনে কথা বলা এবং ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন।
আজিজের ফোন কেটে দেওয়ার পর মুঠোফোনে যোগাযোগ হলো এক তরুণ উদ্যোক্তার সঙ্গে। উদ্যোক্তা হিসেবে বাজেটে কী থাকছে, তাতে আগ্রহ তাঁর। তরুণ এই উদ্যোক্তার আক্ষেপ—কালোটাকা সাদা করা নিয়ে। নিজের নাম প্রকাশ না করে জানালেন, ‘আমরা যারা বৈধভাবে কর দিই তার চেয়ে কম কর দিয়ে কীভাবে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে?’ তিনি জানালেন, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩০ শতাংশ হারে নতুন একটি কর স্তর তৈরি করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মানে হলো, আমরা বৈধভাবে ৩০ শতাংশ হারে কর দেব। আর অপ্রদর্শিত অর্থ যাদের আছে, তারা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করতে পারবে।