তামান্না ইসলাম
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!নিজের হার্ট যদি ভালো না থাকে তবে ভালোবাসাবেন কি করে? নিজেকে ভালোবাসুন নিজের হার্ট ও শরীর কে সুস্থ রাখুন তাদের যত্ন নিন এবং নিজের প্রিয়জনের কথা ভাবুন। আপনি না থাকলে তার কি হবে! আপনি হয়তো কারো কাছে তার পৃথিবী। একটি বটবৃক্ষের মত তার মাথার উপরে আছেন। আপনি হয়তো কারো ভিষণ শখের মানুষ। তাই নিজের জন্য না হলেও তাদের জন্য নিজেকে ভালো রাখুন যারা আপনার ভালো থাকাকে ঘিরেই ভালো থাকে।
হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জন্য আগে থেকেই অসুস্থ থাকাটা জরুরি নয়। বরং আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ মানুষেরও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক যে শুধু বয়স্কদের হয় এমন টা নয়, অল্প বয়সী মানুষেরও হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক এড়াতে ডাক্তারদের পরামর্শের পাশাপাশি নিজেকেও সচেতন থাকতে হবে। নিজের খাওয়া দাওয়া ঠিক রাখার পাশাপাশি শারিরীক ব্যায়াম করা, ধুমপান না করা, ডেইলি রুটিন সঠিক ভাবে পরিচালনা করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা, মানষিক চাপ না নেওয়া, রাত না জাগার দিকেও লক্ষ রাখতে হবে।
হার্টের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য হার্টে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ দরকার হয়। হার্টে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালী যদি বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ফলে যদি রক্ত হার্টে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে হার্টের মাংসপেশিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। আর তখনই হয় হার্ট অ্যাটাক।
হার্টের রক্তনালিতে ব্লকেজ কী কি কারণে হতে পারে এব্যাপারে মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেসের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তৌফিকুর রহমান বলেন যে, সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে, ধূমপান করলে, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ থাকলে বা রক্তে চর্বির আধিক্য থাকলে বা জেনেটিক (বংশগত) ও পারিবারিক কারণে হার্টের রক্তনালিতে চর্বির আস্তর জমে রক্তনালি ব্লকেজ হতে পারে।
হার্ট ব্লক একটি জটিল ব্যাধি তবে প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়ামাত্রই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে ঝুঁকি কিছুটা কমে যায়।
হার্ট অ্যাটাকের কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এসব লক্ষণগুলো হচ্ছে- বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা করা, হাত ও ঘাড় ব্যথা করা, পেটে তীব্র ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
এর প্রতিরোধের জন্য আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চললে আমরা এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি,, হার্ট ব্লক ও হার্টঅ্যাটাকের অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো ধূমপান। তাই ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। নেশা জাতীয় সকল কিছু সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। হার্টের জন্য ক্ষতিকর এমন খাবার বর্জন করতে হবে। যেমন সরল শর্করা, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট ইত্যাদি। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। অহেতুক মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত রক্তচাপ মেপে দেখা উচিত এবং রক্তে কলস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ব্রিটেনে পুষ্টি ফাউন্ডেশন তাদের এক রিপোর্টে তারা বলেছেন, কম বয়স হওয়া শর্তেও একারণে বহু মানুষ মারা যাচ্ছে। তবে আমাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আমরা হৃদ রোগের হাত থেকে বেচে যেতে পারি। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলেই আমরা এ সমস্যা থেকে বেঁচে যেতে পারি।
আমাদের বেশি করে আশ যুক্ত খাবার খেতে হবে। এসব খাবার আমাদের শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে যা আমাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বেশি আঁশ আছে এরকম সবজির মধ্যে রয়েছে শিম ও মটরশুঁটি জাতীয় সবজি, সবুজ জাতীয় শাকসবজি, কলাই ও ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল।
পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলু এবং শেকড় জাতীয় সবজি খোসাসহ রান্না করলে সেগুলো থেকেও প্রচুর আঁশ পাওয়া যায়। এবং তারা বাদামী চাল খাওয়ার পরামর্শ দেন।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করা। কেননা এসব খাবারে কোলেস্টেরল এর মাত্র প্রচুর পরিমানে বেড়ে যায়। চিজ, দই, লাল মাংস, মাখন, কেক, বিস্কিট ও নারকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
লাল মাংসের বদলে খেতে হবে দেশী মুরগির মাংস। মুরগির চামড়া ফেলে দিতে হবে। গরুর মাংস খেলেও রান্নার আগে চর্বি ফেলে দিতে হবে এবং খেতে হবে অল্প পরিমাণে। যেসব মাছে প্রচুর পরিমানে তেল আছে সেসব মাছ খেতে হবে। প্রতিদিন না খেলেও অন্তত সপ্তাহে একবার। দুধের বেলায় চর্বি সরিয়ে নেওয়া দুধ খেতে হবে। খাবারে যাতে বাইরে থেকে চিনি মেশানো না থাকে সেব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। চিনি খাওয়া বাদ দিতে হবে। অতিরিক্ত চা খাওয়া বর্জন করতে হবে। তবে বাদাম ও বীজ খাওয়া যেতে পারে। অলিভ, রেপসিড, সানফ্লাওয়ার, কর্ন এবং ওয়াল নাট তেল দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
লবন একদম পরিত্যাগ করতে হবে। কেননা লবনে শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়। বরং প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে।ওজনের দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
প্রতিদিন ৭-৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে, প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে, মানষিক চাপ কমিয়ে ফেলতে হবে, আর সব থেকে বড় সমস্যা যেটা সেটা হলো ধুমপান করা যাবে না একদমই।
নিজেকে সুস্থ রাখুন, নিজের হৃদয়ের যত্ন নিন। অল্প বয়সে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক ভাবে ডেইলি রুটিন অনুযায়ী চললে ভবিষ্যতে কঠিন সমস্যার সামনে পড়তে হবে না। নিজেকে সময় দিন নিজের ভবিষ্যৎ সুন্দর করে গড়ে তুলুন । এখন প্রশ্ন একটাই, নিজের হৃদয়ের যত্ন নিচ্ছেন তো?
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।