ফিচার ডেস্ক
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!সিংহকে বলা হয় রাজকীয় বন্যপ্রাণী অর্থাৎ বনের রাজা। কিন্তু এই প্রাণীটিই এখন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায়। এর দুটো প্রজাতি এখনো টিকে আছে- আফ্রিকান সিংহ ও এশীয় সিংহ। আফ্রিকান সিংহ মোটামুটি আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে পাওয়া গেলেও অল্প সংখ্যক ভারতীয় সিংহ শুধু ভারতের গির অভয়ারণ্যে পাওয়া যায়। সংখ্যাধিক্যের দরুন সিংহ বলতে তাই আফ্রিকান সিংহকেই বোঝায়। সিংহের বৈজ্ঞানিক নাম Panthera leo। মানুষের কাছে ক্যারিশম্যাটিক প্রাণী হিসেবে পরিচিত এই সিংহ যা অত্যন্ত তেজস্বী, ক্ষিপ্র এবং অসাধারণ সুন্দর। এ কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও বিজ্ঞাপনে অহরহই এই প্রাণীটির ব্যবহার চোখে পড়ে।
জন্মের পর অন্ধ থাকে সিংহ
সিংহ জন্মের পর অন্ধ থাকে। তারা এক সপ্তাহ বয়সে চোখ খুলতে পারে এবং বয়স যত দিন দুই সপ্তাহ না হয়, তত দিন ভালো করে দেখতে পারে না। শাবক প্রতিপালনে পুরুষ সিংহের কোনো ভূমিকা নেই। দুই বছর পর্যন্ত মা সিংহ শাবকগুলোর যত্ন নেয়। ততদিনে তারা শিকার রপ্ত করে ফেলে। দুই বছর বয়সী সিংহ তাদের দল (প্রাইড) থেকে বিতাড়িত হয়। নতুন টেরিটোরিতে আশ্রয় নেয়।
কেশর থেকে জানা যায় বয়স
পুরুষ সিংহ চেনার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে এর কেশর। এর রং যত গাঢ় প্রাণীটির বয়সও ততই বেশি। এ থেকে আরও বোঝা যায় যে, পুরুষ সিংহ থেকে প্রচুর টেস্টোসটেরন হরমোন নির্গত হয়। ফলে এর শক্তিও হয় বেশি। এ কারণে কালো কেশরের পুরুষ সিংহ প্রচুর সংখ্যক নারী সিংহকে আকৃষ্ট করতে পারে।
সিংহের গর্জন পাঁচ মাইল দূর থেকেও শোনা যায়
বিড়াল প্রজাতির যত প্রাণী আছে তার মধ্যে সিংহের গর্জনই সবচেয়ে বেশি জোরালো। এই গর্জন এতই তীব্র যে, এটি ১১৪ ডেসিবল হতে পারে এবং শোনা যেতে পারে পাঁচ মাইল দূর থেকেও। সিংহের গর্জন এত তীব্র হওয়ার পেছনে কারণ এই প্রাণীটির স্বরযন্ত্রের আকার। বেশির ভাগ প্রাণীর ভোকাল কর্ড সাধারণত ত্রিভুজাকৃতির। কিন্তু সিংহের ভোকাল কর্ড চতুর্ভুজ আকারের। এ ছাড়া এটি চ্যাপটা। এ কারণে তারা বাতাসের ওপর খুব সহজেই অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এর অর্থ হলো অল্প চেষ্টাতেই শক্তিশালী গর্জন।
পুরুষ সিংহ দিনে ৪০ কেজির বেশি মাংস খেতে পারে
সিংহ মাংসাশী প্রাণী। জেব্রা, হরিণ, ইম্পালা, আফ্রিকান মহিষ, জিরাফ, শূকর ইত্যাদি এদের প্রধান খাদ্য। বন্যপ্রাণীর ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেঁচে থাকতে হলে একটি নারী সিংহের দিনে গড়ে পাঁচ কেজি এবং পুরুষ সিংহের সাত কেজি মাংসের দরকার হয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এক দিনে এই প্রাণীটি যত মাংস খায় তার পরিমাণ আট থেকে নয় কেজি। তবে তারা এর চেয়েও অনেক বেশি মাংস খেতে পারে। দেখা গেছে, একটি সিংহী এক দিনে ২৫ কেজি এবং একটি সিংহ এক বসাতেই ৪০ কেজিরও বেশি মাংস খেতে পারে।
একমাত্র বিড়াল যার লেজের প্রান্তে পশমের গোছা
বিড়াল প্রজাতির যত প্রাণী আছে তার মধ্যে সিংহ-ই একমাত্র প্রাণী যার লেজের একেবারে শেষ প্রান্তে পশমের গোছা আছে। অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে এটি যোগাযোগের একটি হাতিয়ার। তার পালে আরও যেসব সদস্য থাকে এই গোছার মাধ্যমে সে তাদের বার্তা দিয়ে থাকে। লেজের এই গোছার মাধ্যমে সে অন্যদের দিকনির্দেশনা দেয়, আদেশ দেয় এবং তার ভালোবাসার কথাও প্রকাশ করে থাকে।
ঘণ্টায় ৫০ মাইল গতিতে দৌড়াতে পারে
বন্যপ্রাণীদের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম প্রাণী এই সিংহ, যা কিনা ঘণ্টায় ৫০ মাইল গতিতে দৌড়াতে পারে। সিংহীর (বেশির ভাগ শিকার এই প্রাণীটিই করে থাকে) হৃৎপিণ্ডের ওজন তার দেহের ওজনের তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফলে তার মানসিক শক্তি বা স্ট্যামিনা এখানে মূল বিষয় নয়। বরং এই দ্রুত গতির কারণ হচ্ছে শুধুমাত্র স্বল্প দূরত্বের জন্য। আর এ কারণে কোনো শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে তাকে খুব কাছ থেকে আক্রমণ শুরু করতে হয়।
সবচেয়ে বৃদ্ধ সিংহের বয়স ২৯ বছর
সিংহের গড় আয়ু ১৩ বছর। কিন্তু যদি তারা কোনো খাঁচায় থাকে, যখন বেঁচে থাকার জন্য তাদের শক্তি ও শিকারের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করতে হয় না, তখন তারা এর চেয়েও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বয়সী সিংহের কথা রেকর্ড করা হয়েছে, তার বয়স ছিল ২৯ বছর। পুরুষ সিংহ সাধারণত তিন বছর বয়সে যৌন পরিপক্কতা লাভ করে। বন্য সিংহ দুই বছর পর পর প্রজনন করে। তবে পালিত সিংহরা প্রতি বছর বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এদের গর্ভকাল ১১০-১২০ দিন।
রাতের দৃষ্টিশক্তি মানুষের চাইতে ছয় গুণ বেশি
দিনের বেলায় একটি সিংহের যে দৃষ্টিশক্তি তার সঙ্গে মানুষের দৃষ্টিশক্তির খুব বেশি পার্থক্য নেই। সিংহের রেটিনায় কম ‘কোন সেল’ থাকার কারণে তারা কম রং দেখতে পায়। কিন্তু রাতের বেলায় এই প্রাণীটির দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি বদলে যায়। সিংহের চোখে আছে প্রচুর ফটো-রিসেপ্টর সেল, যা চোখে আলো প্রবেশ করা মাত্রই সেটা গ্রহণ করে। তার পর রেটিনার পেছনে যে রিফ্লেকটিভ মেমব্রেন আছে সেখানে ওই আলো প্রতিফলিত হয়ে গিয়ে পড়ে আলো-সংবেদনশীল কোষে। সিংহের চোখে আছে সাদা স্ট্রিপ, যা থেকে চোখের মণিতে যত বেশি সম্ভব আলো প্রতিফলিত হয়। মোট কথা, দেখার জন্য মানুষের চোখে যত আলোর প্রয়োজন হয় তার ছয় ভাগের এক ভাগ আলোতেই সিংহ দেখতে পায়।
এক মাইল দূর থেকেও শিকারের আওয়াজ শুনতে পায়
সিংহের শ্রবণশক্তি অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে অত্যন্ত তীব্র। এর কান এমনভাবে তৈরি যাতে যেদিক থেকে শব্দ আসে সেদিকে তার কান ঘুরিয়ে দিতে পারে। তার এই স্পর্শকাতর শ্রবণশক্তির কারণে সহজেই যে শিকারকে শনাক্ত করতে পারে। এমনকি ঘন ঝোপের পেছনেও যখন কোনো প্রাণী নিজেকে আড়াল করে রাখে, কিংবা এক মাইল দূরেও থাকে, সিংহ ঠিকই বুঝতে পারে তার খাদ্যটি এখন কোথায় আছে।
সারা বিশ্বে আছে ২০ হাজার সিংহ
নাটকীয়ভাবে কমছে আফ্রিকায় সিংহের সংখ্যা। বলা হচ্ছে, গত তিন প্রজন্মে এই প্রাণীটির সংখ্যা ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সিংহের বসতি ধ্বংস করা, খাবার কমে যাওয়া। সিংহ শিকারও একটি বড় কারণ। তবে অনুমান করা হয় যে ২০ হাজার থেকে ৩৯ হাজার সিংহ এখনো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।