ঝিনেদার কাগজ || Jhenedar kagoj || সত্যের আলোয় সুন্দর

২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাঁ-হাতের ব্যাপার

গাজী তাহির

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন যারা ডান হাতের বদলে বাম হাত দিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এদের বাম হাতের কাজ দেখলে অনেকেই অবাক হয়ে যান! শুধু তাই নয়, অনেকেই বাম হাত দিয়ে গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে রান্না-খাওয়া সবই করতে পারেন। যারা বাম হাত দিয়ে কাজ করেন; তাদের আমরা লেফটিস বা বাঁ-হাতি বলে সম্বোধন করে থাকি।

গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মগ্রহণের সময় শতকরা ৭৫ ভাগ শিশুই বাঁ-হাতি হওয়ার বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়। তবে পরবর্তী সময়ে পরিবেশ ও জীবনযাপন পদ্ধতি মিলিয়ে শিশু ডান-হাতিতে পরিণত হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবৃত্তীয় বিভাগের প্রধান ড. টিম ক্রোর মতে, সম্ভবত মানবদেহের পিসিডিএইচ-১১এক্স জিন হাতের ব্যবহারের এ বিষয়টি নির্ধারণ করে দেয়। অক্সফোর্ডের আরেক বিশেষজ্ঞ ড. ফ্রাংকসের মতে, ক্রোমোজোম ২-এর মধ্যে থাকা এলআরআরটিএম-১ জিনের জন্য মানুষ হাত ব্যবহারে আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। এ ছাড়া মাতৃগর্ভে থাকা ডাই ইথাইল স্টিলবোস্টেরলের সংস্পর্শ বাঁ-হাতি হতে সহায়ক।

গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বে নারীদের তুলনায় পুরুষ বাঁ-হাতির সংখ্যা বেশি।

একসময় সারা বিশ্বেই বাঁ-হাতিরা নানা সামাজিক অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। ইউরোপিয়ান ভাষাও এ জন্য অনেকটা দায়ী। যেমন রাইট (Right) শব্দের অর্থ ঠিক এবং ডান। শুধু এই যুক্তিতে প্রাচীন ইউরোপে বাঁ-হাতিদের অবহেলা করা হতো। লাতিন রাজদরবারে ব্যবহৃত শব্দ ‘sinister’-এর অর্থ হলো বাম। আর এটিকে বিবেচনা করা হতো দুর্ভাগ্য আনার প্রতীক হিসেবে। প্রাচীন মিসরে বাঁ-হাতিরা কখনোই পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করতে পারতেন না। ভারতীয় উপমহাদেশেও বাঁ-হাতিদের নিয়ে নানা ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ছিল।

অনেক সময় ছোট বাচ্চাদের বাঁ-হাতে কাজ করতে দেখা যায়। তখন সমাজে তাদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। আসলে বিষয়টিকে অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না। অনেক বাবা-মা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও অনেকেই কিন্তু বাঁ হাতে লেখা, খাওয়া ঠিক মেনে নিতে পারেন না।

কেবল মানুষই নয়, অনেক পশুপাখিও বাঁ-হাতি বৈশিষ্ট্য হয়। এক গবেষণায় বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারুরা সব বাঁ-হাতি। সেখানে বলা হয়, দ্বিপদী প্রাণীর ক্ষেত্রে হয়তো এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু চতুষ্পদী প্রাণীরা এ ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে না।

প্রাণীর এই বিশেষ বিষয়টি নিয়ে টিয়া পাখি ও মুরগির ওপর গবেষণা করেছেন নরওয়ের ব্রুনে ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. লেসলি রজারস। তিনি জানান, চোখ ও হাতের সংযোগের কারণে প্রাণীরা শরীরের বিভিন্ন অংশকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে। যেমন, যদি কোনো টিয়া পাখি ডান চোখে কোনো খাবার খেয়াল করে, তবে স্বভাবতই সে তা ধরতে ডান পা এগিয়ে দেবে। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য রজারস মস্তিষ্কের ‘হেমিস্ফিয়ার’ অংশের কার্যপ্রণালির কথা তুলে ধরেন। মস্তিষ্কের এই অংশ ডান ও বামের বিষয়টি নির্ধারণ করে। কাজেই এই অংশটি স্বাভাবিকভাবেই বাঁ-হাতি বা ডান-হাতি হিসেবে মানুষকে তৈরি করে।

কর্মক্ষেত্রে বাঁ-হাতিদের অসুবিধা দূরীকরণে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৭৬ সাল থেকে ১৩ আগস্টকে ‘লেফট হ্যান্ডারস ইন্টারন্যাশনাল ডে বা আন্তর্জাতিক বাঁ-হাতি দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়। এর শুরুটা করেন ডিন আর ক্যাম্পবেল নামে এক ব্যক্তি, যিনি ‘লেফ্টহ্যান্ডার্স ইন্টারন্যাশনাল’ নামে এক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে প্রতি বছর ১৩ আগস্ট পালিত হয় এই দিনটি। বাম হাতে কাজ করার বিষয়টিকে অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না। তাই বিশ্বজুড়ে ‘বাঁ-হাতি দিবস’ পালন করা হয় এসব মানুষকে বোঝানোর জন্য যে, এটা কোনো অস্বাভাবিকতা নয়।

দেখা যায়, পৃথিবীতে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষই ডান-হাতি। আর মাত্র ১০ ভাগ লোক বাঁ-হাতি। ডান-হাতি মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাঁ-হাতি এই ১০ ভাগের মূল্যায়ন দেখা যায় না, এমনকি কোনো পণ্য প্রস্তুতের ক্ষেত্রে তাদের কথা ভাবাও হয় না। যার বড় প্রমাণ কম্পিউটারের মাউস থেকে শুরু করে আলমারির হাতল পর্যন্ত। এসব জিনিস ডান-হাতি ব্যবহারকারীদের উপযোগী করে তৈরি। এ কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাঁ-হাতি মানুষদের নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।

ডান-হাতিরা যেমন মস্তিষ্কের বাঁ দিকের অংশটি বেশি ব্যবহার করেন, তেমনই বাঁ-হাতিরা মস্তিষ্কের ডান দিকের অংশ বেশি ব্যবহার করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ডান এবং বাঁ অংশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ডান-হাতিদের থেকে বাঁ-হাতিদের বেশি, এর ফলেই তারা বেশি বুদ্ধিমান হন। এমনকি বাঁ-হাতিদের জলের তলায় দৃষ্টিশক্তি ডান-হাতিদের থেকে বেশি।

বিশ্বের বিখ্যাত মানুষের তালিকায় বাঁ-হাতিদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, অ্যারিস্টটল, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, মেরি কুরি, বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, অমিতাভ বচ্চন, সচীন টেন্ডুলকর, ব্রায়ান লারা, ওয়াসিম আকরাম, রাফায়েল নাদাল, ডেভিড গাওয়ার, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, টম ক্রুজ, হেলেন কেলার, লেডি গাগা, লুইস ক্যারল, প্রিন্স উইলিয়াম, অপরাহ উইনফ্রে থেকে লিওনেল মেসি; এরা সবাই বাঁ-হাতি। এ ছাড়া বারাক ওবামাসহ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অন্তত চারজন ছিলেন বাঁ-হাতি।

গবেষণা বলছে, বাঁ-হাতিরা ডানহাতিদের থেকে বেশি সৃষ্টিশীল এবং বুদ্ধিমান হন। ওপরের তালিকা দেখলে অবশ্য এই দাবি সম্পর্কে সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। সব মিলিয়ে বলা যায়, ডান-হাতিদের চেয়ে অনেকাংশেই এগিয়ে রয়েছেন বাঁ-হাতিরা।

আরও পড়ুন

মিয়ানমারে লড়াইয়ের জন্য জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে লড়াইয়ের জন্য জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গারা

অনুবাদ রয়টার্স থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী বসতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস। ২০১৭ সালে বৌদ্ধ অধ্যুষিত মায়ানমার সরকার দেশটির

যবিপ্রবির ভিসি অধ্যাপক ড. এম মজিদের সংবর্ধণা কমিটির প্রস্তুতি সভা

হরিণাকুণ্ডুতে যবিপ্রবির ভিসি অধ্যাপক ড. এম মজিদের সংবর্ধণা কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

হরিনাকুণ্ড প্রতিনিধি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর বরেণ্য শিক্ষাবীদ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সলর অধ্যাপক ড. এমএ মজিদের সংবর্ধনা প্রদান কমিটির

মানুষের ভোটার অধিকার হরণ

‘মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি’

মোস্তাফিজুর রহমান, কোটচাঁদপুর মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি। ধর্ষণ সেঞ্চুরি করে উল্লাস করে এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি।

দরিদ্র মেধাবী ছাত্র নীরবের পাশে মানবতার হাত

দরিদ্র মেধাবী ছাত্র নীরবের পাশে মাও. আবু তালেব

বনি আমিন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ঝিনাইদহের মঙ্গলপৈতা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র সালমান ইসলাম নীরবের পড়াশোনার পথে দীর্ঘদিনের আর্থিক

কপ২৯: বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেল দরিদ্র দেশগুলো

কপ২৯: বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেল দরিদ্র দেশগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট দীর্ঘ দর-কষাকষির পর সমঝোতায় পৌঁছেছে কপ২৯। বিশ্বের ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে অভিযোজন