ডেস্ক রিপোর্ট
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!শৈলকুপা ঝিনাইদহের ছয়টি উপজেলার একটি। স্থানীয় বাসিন্দা, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকেরা বলছেন, উপজেলাটির প্রায় সব গ্রামে কথিত সামাজিক দল ও তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। জাতীয় তথ্য বাতায়নের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, উপজেলাটিতে গ্রামের সংখ্যা ২৮৯। এই উপজেলার প্রতিবেশী ঝিনাইদহ সদর উপজেলা, হরিণাকুণ্ডু, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও খোকসা এবং রাজবাড়ীর পাংশায় এত খুনোখুনি নেই।
শৈলকুপার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০০ সালের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় ‘সামাজিক দল’ গঠন করে কথিত সমাজপতিদের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা বাড়তে থাকে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলেও শৈলকুপার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হাই। তিনি টানা পাঁচবারের সংসদ সদস্য। স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে তিনি বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় নিজের সমর্থকদের নিয়ে দল গঠন করেন। এই দলগুলোই ‘সামাজিক দল’ নামে পরিচিতি পায়। দলের প্রধানকে বলা হয় ‘সমাজপতি’।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবদুল হাইয়ের সমর্থিত সামাজিক দলগুলো আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। আধিপত্য ধরে রাখতে গিয়ে আবদুল হাইয়ের বিরোধী পক্ষও বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক দল গঠন শুরু করে। পাল্টাপাল্টি এই সামাজিক দল গঠন এখনো চলছে।
আবদুল হাই গত মার্চে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নায়েব আলী জোয়ারদার। তার ভাষ্যমতে হানাহানি, লুটপাটের রাজনীতি চলছে প্রায় ২০ বছর ধরে। এতে পুরো শৈলকুপায় অস্থিরতা হয়েছে, খুনোখুনি হয়েছে। তিনি শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
যদিও শান্তির লক্ষণ নেই। গত ২২ মে শৈলকুপার ধলোহরাচন্দ্র ইউনিয়নে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় ৪০টির বেশি বাড়িঘর। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই সমাজপতির সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছিল। আসামি ছিনতাইয়ের জন্য ৯ জুন শৈলকুপা থানায় হামলা ও ভাঙচুরের পেছনেও স্থানীয় সমাজপতিরা রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।
সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবহার করা হয় দেশি ধারালো অস্ত্র, হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এসব অস্ত্র থাকে। কখনো কখনো আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও দেখা যায়। শুধু প্রতিপক্ষকে মারধর ও খুন নয়, বাড়িতে বাড়িতে লুটপাটও চালানো হয়।
শৈলকুপার গ্রামগুলোতে বড় সামাজিক দল আছে, ছোট সামাজিক দল আছে। দেখা যায়, আশপাশের কয়েকটি বাড়ির ১৫-২০টি পরিবার নিয়ে একটি দল ঘোষণা করা হলো। নিরীহ কারও পক্ষে দলে যোগ না দিয়ে থাকার উপায় নেই। যোগ না দিলে, হামলা, সহিংসতায় অংশ না নিলে বিপদে পড়তে হয়। কোথাও সহায়তা পায় না নিরীহ পরিবারগুলো।
ঝিনাইদহ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শৈলকুপা পৌরসভার মেয়র কাজী আশরাফুল আজম বলেন, প্রশাসন এ ধরনের ঘটনাগুলো নিরসনে কখনোই আন্তরিক ছিল না। কখনো কখনো প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল হাইয়ের পক্ষ নিয়ে তা উসকে দেওয়া হয়েছে।
মেয়রের অভিযোগ ও স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আজিম-উল-আহসানের কাছে। তিনি বলেন, ১৫ বছর আগে শৈলকুপায় যে পরিস্থিতি ছিল, এখন ধীরে ধীরে সেটির উন্নতি হচ্ছে। স্থানীয় বিরোধের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সে জন্য পুলিশ কাজ করছে। কোনো ঘটনা ঘটে গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অবশ্য স্থানীয় লোকজন বলছেন, গ্রামগুলোতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নয়, কার্যকর সমাজপতিদের শাসন। হামলার ভয়ে, প্রাণ হারানোর ভয়ে অনেক তরুণ, অনেক যুবক গ্রামছাড়া। একটি গ্রামে গিয়ে পাওয়া গেল এক বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে। তাঁদের চার ছেলে ভয়ে গ্রামে যেতে পারেন না। বৃদ্ধা বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা (১৭ জুন উদ্যাপিত) আসছে। ছেলেদের মুখ দেখা হবে না।
বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার কাছে তাঁদের ছেলেদের মুঠোফোন নম্বর চেয়েছিলাম। তাঁরা দিতে রাজি হননি। তাঁদের সন্দেহ আমরা হয়তো কোনো সামাজিক দলের লোক।