শৈলকুপা, ঝিনােইদহ প্রতিনিধি
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!ঝিনাইদহের শৈলকুপায় অবৈধ ক্লিনিকে ভূয়া চিকিৎসক দিয়ে সিজারের সময় ফাতেমা খাতুন নামের এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটেছে। প্রসূতির মৃত্যুর পরেও সে ‘বেঁচে আছে’ স্বজনদের এমন কথা জানিয়ে একটা এ্যাম্বুলেন্সে গোপনে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে ডাক্তাররা প্রসূতির মৃত্যুর খবর জানালে তা জানাজানি হয়। শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুর খন্দকার (প্রাই.) হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রবিবার দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি জানাজানি হলে সন্ধ্যায় প্রাইভেট হাসাপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালায়। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে শৈলকুপার এসিল্যান্ড বনি আমিন অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ ঘোষনা করেন। একই সাথে অভিযুক্ত ডাক্তার ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন। শৈলকুপার সহকারী কমিশনার ভ’মি( এসিল্যান্ড) বনি আমিন জানান, অভিযুক্ত প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ সহ ডাক্তার ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন।
নিহত প্রসূতি ফাতেমা বেগমের স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, রবিবার সকালে শৈলকুপার মালিথিয়া গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে শহরের কবিরপুরে খন্দকার(প্রাইঃ) হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারের জন্য ভর্তি করে। দুপুরে সেখানে সিজার করেন কথিত ডাক্তার কাশমিম সুজন, রোগীর এনেসথেসিয়া করেন আরেক ভ’য়া চিকিৎসক মুনতাসির। সিজারের পরপরই মারা যান প্রসূতি ফাতেমা খাতুন, তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন, সদ্যপ্রসূত নবজাতক সুস্থ রয়েছে।
নিহত প্রসূতি মৃত্যুর পরেও স্বজনদের ভ’ল বুঝিয়ে বেঁচে আছেন জানিয়ে দ্রুত একটি এ্যাম্বুলেন্সে কুষ্টিয়া মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে জানানো হয় আগেই প্রসূতির মৃত্যু ঘটেছে। এসব জানাজানি হলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে ।
নিহত প্রসূতির স্বামী জাহিদুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন কে সিজারের নামে হত্যা করা হয়েছে, সিজারের আগে সে সুস্থ্য ছিল, তিনি ন্যায় বিচার চেয়ে বলেন, মৃত্যুর পরেও কেন কুষ্টিয়া পাঠানো হলো।
অভিযুক্ত কবিরপুর প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মোঃ রেজা সাংবাদিকদের বলছেন, ‘আমরা রোগীর স্বজনদের সাথে মিমাংসা করে ফেলেছি, এখন এসব অভিযান কেন?’ আর প্রাইভেট হাসপাতালটির মালিক ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তিনি এসব ব্যাপারে কিছুই জানেন না ।
অপচিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ডাক্তার কাশমিম সুজন সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি তো আপনাদের ভাই, নিউজ করার দরকার নেই, একটু দেখবেন’ । এর আগেও তার হাতে সিজারের সময় নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এদিকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ আহসানুল মিজান রুমি জানান, অভিযুক্ত অবৈধ ক্লিনিকের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে এরই মধ্যে সিভিল সার্জন ও শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলাপ করেছেন। এছাড়া যে ডাক্তার অপারেশন করেছেন সেই কাশমিম সুজন কে গত মার্চ মাসে চিঠি( স্মারক নং-উপ.স্বা.কম./শৈল/ঝি/২৪/২৯৩) দিয়ে বলা হয়েছে, ‘বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ব্যাতিরিকে কোন অপারেশন করতে পারবে না কিন্তু আপনি বিশেষজ্ঞ না হয়েও বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করছেন, যা সরকারী আদেশের পরিপন্থি। তাই আপনাকে সকল প্রকার অপারেশন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হলো’। টিএইচও আরো বলেন, রবিবার অপচিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় ঐ অভিযুক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।