কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি (টপসয়েল)। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না ফসলি জমির মাটি কাটা। বিকাল থেকে মধ্যরাত অবধি যে যেভাবেই পারছে স্কেভেটর (মাটি খননযন্ত্র) দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ডাম্পারযোগে (মিনি ট্রাক) ইটভাটায় সরাবরাহ করছে। রাতের আঁধারে ফুলের জমি নষ্ট করে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি কাটা দণ্ডনিয় অপরাধ।
জানা যায়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
উপজেলার ত্রিলেচাঁনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম (৬০) এর ফসলের জমি থেকে মাটি কেটে পুকুর খননের দৃশ্য সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিলেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর ভষ্যমতে আনুমানিক বিকাল ৪টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত চলে মাটি কাটার কাজ। এই মাটি খনন এবং বিক্রয়ের টেন্ডার নিয়েছেন বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের লুৎফর (৪৫) ও ঈশ্বরবা গ্রামের এনামুল আর (৩৫)। তারা বানুড়িয়া গ্রামের গোলাপ ডাক্তারের ছোট ভাই প্রবাসী হাসানের এর নিকট এ মাটি বিক্রয় করেছেন।
এখান থেকে প্রতিনিয়ত ঈশ্বরবার খোকন মিয়ার ভাটায় মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে মাটি খনন এবং মাটি আনা নেওয়ার কারণে স্থানীয় এলাকাবাসীর রাতে ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে। মাটি পরিবহনে পাকা রাস্তা ব্যবহার করায়ট্রাক থেকে মাটিপড়ে নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। শীত মৌসুম চলায় ধুলার সৃষ্টি করে চারপাশের বায়ুদূষনের ঘটনা ঘটছে। রাস্তার দুইধারে বসবাসকারী সর্বসাধারণের বাড়ির আঙিনা ধুলায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই পাকা রাস্তা হতে পারে কর্দমাক্ত। ফলে ঘটতে পারে সড়ক দুর্ঘটনার মতো প্রাণহানির ঘটনা।
এ বিষয়ে ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের নায়েব মো. ইকবাল হুসাইন (৩৩) বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।এমনকি তিনি গোপনে অর্থ লেনদেন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়াই বে আইনী ভাবে চলা এ মাটি খনন ও পরিবহনের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন “এ ধরনের কোন কাজের সঙ্গে সংযুক্ত নেই, আর কোন প্রকার অর্থ লেনদেন করিনি”
অভিযুক্ত মাটি ব্যবসায়ী বলেন, “আমি কোন প্রকার মাটির ব্যবসা করছি না”
অভিযুক্ত জমির মালিক সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি আমার পুকুরের পাড় বাঁধায় করছি তাছাড়া কোন মাটি বিক্রি করছি না।