Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
মোঃ মাসুদ রানা, (কালীগঞ্জ)ঝিনাইদহ
আমার বাবার কি জানাজা নামাজ হবে না? মানুষের দূর্ঘটনা বা রোগ ব্যাধিতে
মৃত্যু হয়। কিন্তুআমার বাবাকে খুনিরা হত্যার পর দেহ কেটে টুকরা টুকরা করেছে।
সেই টুকরাতে হলুদ মশলাও মিশিয়েছে। কি কষ্ট দিয়ে আমার বাবাকে মেরেছে
খুনিরা। আমি জীবনেও তা ভুলতে পারবনা। আমি আমার বাবার লাশের এক টুকরো অংশ
দেখতে চায়। ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকারীদের
বিচার চেয়ে শুক্রবার বিকালে শহরের মেইন বাসষ্টান্ডে এক মানববন্ধনে কাদতে কাদতে
কন্যা ডরিন একথা বলেন। কন্যা ডরিন বলেন, আমি এতিম হয়ে গেলাম। আমার বাবার
হত্যাকারী যাদেরকে ধরা হয়েছে তাদের প্রিভিয়াস রেকর্ড দেখুন। আমার বাবার মত
তারা এমন অনেক নিরিহ মানুষকে খুন করেছে। আমি চাই দ্রতই খুনীদের আটক করা
হোক। নইলে আমার মত আরো কেউ এতিম হতে পারে। ডরিন বলেন, মাননীয়
প্রধানমন্ত্রীর যদি তার বাবার হত্যার বিচার করতে পারেন, তাহলে আমার বাবার হত্যার
বিচারও তিনি করতে পারবেন। পিতার শোকে কাতর হয়ে বলেন, তার বাবার খুনিদের
প্রধান হোতা কোটচাদপুর উপজেলার আক্তারজ্জআমান শাহিনকে দ্রæত আটক করা
হোক। সেই সাথেই তার ভাই কোটচাদপুরের পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিমকেউ
আটকের দাবী জানান। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তার খুনি ভাই শাহিনকে
দ্রæত আটক করা সম্ভব হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন আপনি
আমার অভিভাবক। আমি ও আমার পরিবারকে রক্ষা করবেন। শুক্রবার বিকাল ৪ টায় এমপির
নিজ ওয়ার্ড কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডবাসীর উদ্যোড়ে শহরের মধুগঞ্জ বাজার
মেইন বাসষ্টান্ডে ওই মানববন্ধন করা হয়। নারী, পুরুষ সহ অগনিত মানুষের অংশগ্রহনে
মানববন্ধনটি এক পর্যায়ে প্রায় জনসভাতে রুপ নেয়।
এমপি আনারের মরদেহের সন্ধান চেয়ে ও হত্যাকান্ডে জড়িত সকল খুনিদের খুজে বের
করে ফাসির দাবীতে ওই মানববন্ধন করে তারা। মানববন্ধনে এমপি কন্যা ডরিন ও
আ’লীগের সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী সহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। এ
সময় বক্তারা বলেন, এমপি আনারের মত একজন মানবদরদী নেতা আর কখনও জন্ম হবে না।
তার অভাব পূরন করার মত নয়। সেই মানুষটিকে যারা নৃশংশভাবে কেটে টুকরা টুকরা
করে হত্যা করেছে তারা মানুষ নয়, নরপশু। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, ব্যাবসায়িক বা
যে চক্রের কোন্দলেই খুন হোক সকল খুনিদের মুখোশ উন্মোচন করে দ্রæত গ্রেফতার
পূর্বক ফাসির দাবী জানান তারা। কালীগঞ্জ পৌর আ’লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও
পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা
আ’লীগের সাবেক সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু, উপজেলা
যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী,
আ’লীগ নেতা ওহিদুজ্জামান ওদু. মতিয়ার রহমান মতি, ও মাসুদুর রহমান মন্টু
প্রমুখ। সাবেক ছাত্ররীগ নেতা আনিচুর রহমান মিঠুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে
সর্বস্তরের হাজার হাজার নারী পুরুষ অংশ নেন।
এর আগে (শুক্রবার) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে এমপি কন্যা ডরিন তার শহরের বাসভবনের
নিচে উপস্থিত গনমাধ্যমকর্মীদের কাছেও বাবা হত্যার বিচার দাবী করে কথা বলেন।
ডরিন ও তার মাতা বাবার সন্ধান পেতে ১৩ মে থেকেই ঢাকাতে অবস্থান করছিলেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে তারা নিজ বাড়িতে এসেছেন।
কন্যা ডরিন গনমাধ্যম কর্মীদের বলেন, তার বাবা ভারতে চিকিৎসায় গিয়ে
নিখোঁজের পর থেকে সরকারের সকল সংস্থা প্রশাসন তাকে উদ্ধারে সহযোগিতা করে
আসছে। তিনি তার বাবার মরদেহ উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা চান। এদিকে
এমপি আনারের মৃত্যুর খবরে শুক্রবার দুপুরে বাদ জুম্মা তার নির্বাচনী এলাকার সকল
মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১২ মে ভারতে গিয়ে নিঁখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল
আজীম আনার হত্যাকান্ডটি নিয়ে তার এলাকায় এখনো ধোয়াশা কাটেনি। ভারত
যাবার ১০ দিন পর বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা
গার্ডেনে খুন হয়েছে বলে গনমাধ্যমে প্রচার হয়। এমনকি তার দেহ খন্ড বিখন্ড করা
হয়েছে বলেও প্রচার হয়। যেহেতু তার মরদেহ এখনো উদ্ধার হয়নি তাই সাধারন মানুষের
কাছে প্রশ্ন হয়ে ঘুরছে এমপি কি সত্যই মারা গেছেন না কোথাও গুম হয়ে
আছেন?
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। তিনি
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা ৩ বার আওয়াামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য
নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৯৩ সালে পৌর কাউন্সিলর
নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমপি হবার পর দির্ঘ গেল ১০ বছরে তিনি এলাকার ব্যাপক
উন্নয়ন করছেন। সাংসদ হিসাবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনাম
রয়েছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে
মানুষের সাথে দেখা করে সমস্যা শোনেন ও সমাধান করেন। তিনি চলাচলের সময় কোন
পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা একা চলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সবথেকে
আলোচিত বিষয় তার নির্বাচনী এলাকায় যে কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার বাড়িতে
যান এবং শোকার্ত পরিবারকে শান্তনা দেন। এমনও হয়েছে তিনি একদিনে ১০ জন
মৃত্যু ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে দেখা করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায়
১০ হাজারের অধিক মৃত ব্যক্তির জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছেন। যা দেশের একজন
জনপ্রতিনিধি হিসাবে বিরল।