এম এ কবীর, ঝিনাইদহ :
গল্পটা সিনেমার নয়। ঘটেছে বাস্তবে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নে শাহীন নামের এক যুবককে বিয়ে করতে অনশনে বসেন একসঙ্গে দুই তরুণী। অবশেষে এই ত্রিভূজ প্রেমের অবসান হয়েছে। অনশনে বসা সাদিয়া স্বেচ্ছায় ওই বাড়ি থেকে চলে যায়। এতে রুনাকে বিয়ে করার মধ্য দিয়ে এই ত্রিমুখী প্রেমের সমাধান টানে শাহিন। রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে উভয় পরিবারের সমর্থনে গাগান্ন গ্রামে শাহিনের বাড়িতে বিয়ে হয় শাহিন ও রুনার।
জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে সাদিয়া খাতুন স্বেচ্ছায় অনশন ভেঙে চলে যাওয়ার পর সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের গাগান্না গ্রামের ইকরামুল হকের ছেলে শাহীন ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাশাটিয়া ইউনিয়নের ঘোড়াগাছা গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে রুনার বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে শাহিন ও রুনার পরিবার।
এর আগে শনিবার বিকেলে রুনা খাতুন বিয়ের দাবিতে শাহিনের বাড়িতে অবস্থান নেয়। রুনা খাতুনের অনশনের খবরে সাদিয়া খাতুনও বিয়ের দাবিতে শাহিনের বাড়িতে অনশনে বসে। এক যুবকের বাড়িতে দুই তরুণীর অনশনের খবর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। কাকে রেখে কাকে বিয়ে করবেন এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে শাহিন। পরে সাদিয়ার পরিবার শাহিন সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়ার পর স্বেচ্ছায় ফিরে যায় সাদিয়া।
শাহিনের প্রতিবেশী জামাল হোসেন জানান, দীর্ঘ দুই বছর ধরে রুনার সঙ্গে শাহিনের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। শাহীন ধর্ষণ মামলার আসামি হওয়ার পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রুনাকে পরিবার থেকে তার অমতে বিয়ে দিতে গেলে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে শাহীনের বাড়িতে উঠে। অন্যদিকে দুই মাস আগে শাহিন সাদিয়া নামের আরেক মেয়েকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে তাদের বাড়িতে দেখতে যায়। সেখান থেকে সাদিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠ শাহীনের। প্রেমিকের বিয়ের কথা জানার পর সাদিয়াও তার বাড়িতে আসে বিয়ের দাবিতে। এমন ঘটনায় শাহীন ও তার পরিবারের সবাই হতভম্ব হয়ে পড়ে। পরে গ্রামের সবাই মিলে সাদিয়া ও রুনার সঙ্গে কথা বলে। সাদিয়া নামের ওই মেয়েটি শাহিনদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর অনশন ভেঙে স্বেচ্ছায় চলে যায়। পরে শাহিন ও রুনার পরিবারের সমর্থনে দুজনের বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়।
আরেক প্রতিবেশী আফাজ উদ্দীন জানান, ইকরামুলের ছেলে শাহিনকে বিয়ের দাবিতে দুটি মেয়ে অনশনে বসে। তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নিতে বলা হলে তারা দুজন একইসঙ্গে শাহিনকে বিয়ে করতে রাজি হয় এবং শাহিনও দুজনকে একসঙ্গে বিয়ে করতে চায়। পরে দুজনকে আলাদাভাবে জেনেবুঝে সিদ্ধান্ত দিতে বলা হলে সাদিয়া তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে অনশন প্রত্যাহার করে স্বেচ্ছায় চলে যায়। পরে রুনার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুই পরিবারের লোকজন ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী ও সামাজিকভাবে তাদের বিয়ে দিতে রাজি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহিন বলেন, এক বছর আগে রুনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাঝে ঝামেলা হওয়ায় তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত দুই মাস হলো সাদিয়াকে বিয়ের উদ্দেশ্যে ওদের বাড়িতে দেখতে যাই। সেখান থেকেই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মধ্যে তার সঙ্গে মাঝে ঝামেলা হওয়ায় গত ১৮ দিন ধরে কোনো যোগাযোগ ছিল না। হঠাৎ করে শনিবার বিকেলে রুনা বাড়িতে চলে আসে এবং বলে তার বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। সে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। এরপর রাত ৮টার দিকে রুনার আসার কথা শুনে সাদিয়াও বাড়িতে চলে আসে। কাকে রেখে কাকে বিয়ে করব এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। পরে সিদ্ধান্ত নিই দুজনকেই বিয়ে করব। এর মধ্যে হঠাৎ করে সাদিয়া তার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে। এখন রুনাকেই বিয়ে করব।
রুনার মামা লিটন বলেন, গতকাল রাত থেকেই শাহিন বিয়ে করবে বলে কালক্ষেপণ করছে। এখনো পর্যন্ত বিয়ে (বিকেল সাড়ে ৫টা) হয়নি। তবে আজকেই রুনা ও শাহিনের বিয়ে হবে। আমরা সামাজিকভাবেই তাদের দুজনের বিয়ে সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। তারপরও শাহিনকে নিয়ে আমাদের সন্দেহ, সে হয়ত রুনার সঙ্গে প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিয়ে না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস নেই।
হলিধানী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সন্তোষ কুমার বলেন, শনিবার রাতে যে দুটি মেয়ে শাহিনের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে আসে তাদের মধ্যে সদিয়ার বিয়ের বয়স না হওয়ায় সে চলে গেছে। পরে রুনার সঙ্গে বিয়ের কথা রয়েছে। হয়ত আজ রাতের মধ্যেই বিয়ে হবে।