সাইফুল ইসলাম, ঝিনাইদহ
রাস্তার দু পাশে সারি সারি মেহগুনি গাছ প্রচণ্ড খরার সময় পথচারীদের শীতল ছায়ার সঙ্গে সঙ্গে পিচঢালা রাস্তা ঠান্ডা রাখাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। রাস্তার দুই পাড় সংরক্ষণেও তার ভুমিকা অন্যন্য। সেই গাছ কর্তন? তাও রাতের আধারে? দেখার কি কেউ নেই? ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের কোলা ইউনিয়নের সরকারি গাছগুলো একের পর এক কাটা পড়ছে বনদস্যুদের অবাধ থাবায়। এইবার রাতে নয়, দিনের আলোয় প্রকাশ্যেই চলছে এই চুরির মহোৎসব। রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার ছত্রছায়ায় সুরক্ষিত এই অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারছেন না স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!গত ২৪ জানুয়ারি, কোলা ইউনিয়নের পারিয়াট স্কুল সংলগ্ন সড়কের পাশে দীর্ঘদিন ধরে বেড়ে ওঠা দুটি প্রকাণ্ড মেহগনি গাছ প্রকাশ্য দিবালোকে শ্রমিকের মাধ্যমে কেটে ফেলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, স্থানীয় বিএনপি নেতা আতিয়ার মুন্সির পুত্র শফিকুল এবং নজরুল মুন্সির পুত্র সোয়ান এই অপরাধে সরাসরি জড়িত। গাছগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে স্থানীয় গাছ ব্যবসায়ী এবং সো-মিল মালিক মো. দুলালের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা জানি কারা এই অন্যায় করছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কিছু বলতে পারছি না। নিজের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবতেই হচ্ছে”
এ প্রসঙ্গে মো. দুলালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, “আমি কেবল শ্রমিক সরবরাহ করেছি। গাছ কাটা হচ্ছে বা কার নির্দেশে হচ্ছে, সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”
এর আগেও, গত ২৯ নভেম্বর, রাতের আঁধারে দামোদরপুর গ্রামে সরকারি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে সেই গাছগুলো উদ্ধার করা হয়, তবে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। কিন্তু সরকারি সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব যেখানে প্রশাসনের কাঁধে, সেখানে তারা রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে নতজানু।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এই ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না তারা। কারণ, ক্ষমতার প্রভাবে অপরাধীরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ঠিকাদার মিলনের ছোট ভাই বিল্লাল এক সাংবাদিককে ফোন দিয়ে এই বিষয়ে আর কোনো খোঁজ না নিতে অনুরোধ করেন। তিনি অকপটে স্বীকার করেন, তাঁর ভাই এই অপরাধের সাথে জড়িত।
কোলা ইউনিয়নের এই ঘটনাগুলো শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতার চিত্রই তুলে ধরছে না বরং রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহার এবং সাধারণ মানুষের প্রতিবাদহীন অবস্থানকে সামনে আনছে।
কোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েক শাহজাহান আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমি এখনও এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাইনি। তবে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে এবং যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
সরকারি সম্পদের এভাবে লুট ও বিক্রি প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে চরম প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জনগণের প্রশ্ন, এই বেআইনি কর্মকাণ্ড থামাতে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসন কবে সক্রিয় হবে? নাকি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই অন্যায় অব্যাহত থাকবে?