ডেস্ক রিপোর্ট
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউনিয়নের রত্নাট গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার রাজনৈতিক বিরোধ থেকে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হন দুই ব্যক্তি—আলম শেখ (৫৪) ও মোনছের আলী (৫২)। এক দশক হতে চলল, সেই দুই খুনের মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
ঝিনাইদহ শহর থেকে শৈলকুপার বগুড়া বাজারের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটারের মতো। ৯ জুন বিকেলে বাজারটিতে গিয়ে পাওয়া গেল খুন হওয়া আলম শেখের ছেলে শিমুল শেখকে। বাবা যখন খুন হন, তখন তাঁর বয়স ছিল ২০ বছর। এখন ৩০। তিনি কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালান।
পিতার খুনের বিচার হয়েছে কি না, জানতে চাইতেই শিমুল শেখ প্রথম আলোকে বললেন, বিচার হয়নি। ‘সমাজপতি’দের সালিসে ২০২০ সালে সমঝোতা হয়েছে। তাঁরা পেয়েছেন ছয় লাখ টাকা। বিচার যে হবে না, সেটা তাঁরা জানেন। মেনেও নিয়েছেন। মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
বগুড়া বাজারে যখন মানুষের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন ৪০ জনের মতো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা নিজেদের ইউনিয়নে খুনোখুনি ও পরবর্তী সময়ে সমঝোতার কথা জানাচ্ছিলেন। ভিড়ের মধ্যে ছিলেন ২০১৪ সালে খুনের শিকার মোনছের আলীর ছেলে তুহিন হোসেনও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছি। সমঝোতা যেহেতু করতেই হয়েছে, এ জন্য টাকা নিয়েছি।’
শৈলকুপা উপজেলায় এমন খুনোখুনি নিয়মিত ঘটনা। নেপথ্যে রাজনৈতিক বিরোধ। সেই বিরোধ থেকে তৈরি হয় কথিত সামাজিক দল, যা অনেকটা বাহিনীর মতো কাজ করে। দলের নেতৃত্ব দেন সমাজপতিরা। তাঁদের প্রশয় দেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ফলে খুনোখুনি বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ বছরে শৈলকুপায় ১২৭ জন ব্যক্তি খুন হয়েছেন। এর মধ্যে ৯০ জন খুন হয়েছেন কথিত সমাজপতিদের দ্বন্দ্বের জেরে। জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের বছরগুলোতে খুনোখুনি বেশি হয়েছে।
গ্রামগুলোতে মারামারি, হামলা, পাল্টা-হামলা ও খুনোখুনি দৈনন্দিন ঘটনা হলেও বিরল খুনের ঘটনায় শাস্তি। ৯০টির মধ্যে একটি খুনের বিচার হয়েছে, এমন নজির কেউ তুলে ধরতে পারলেন না। বেশির ভাগ ঘটনায় গ্রাম্য সালিসে সমঝোতা হয়েছে। বিপুল টাকা আসামিদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সেই টাকার একাংশ স্বজনহারা পরিবারকে দিয়ে বাকিটা ভাগ-বাঁটোয়ারা করেছেন সমাজপতি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।
ওদিকে আদালতে মামলা চলছে। স্বজনহারা পরিবারগুলোর সদস্যরাই আদালতে গিয়ে সমাজপতিদের শিখিয়ে দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ফলে মামলায় শাস্তির সুযোগ থাকছে না।
খুনের শিকার এক ব্যক্তির এক স্বজন নাম প্রকাশ নাম করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আদালতে বিচার চলছে ঠিকই, কিন্তু মামলায় কারও সাজা হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরাই আদালতে দোষীদের পক্ষে কথা বলেন। এটা সমাজপতিদের করে দেওয়া সমঝোতার অংশ। তিনি বলেন, সালিসে সমঝোতার পর আদালতে গিয়ে কেউ যদি সত্য কথা বলেন, তাঁকে গ্রামছাড়া হতে হবে। প্রাণ হারানোর আশঙ্কাও থাকে।