ডেস্ক রিপোর্ট
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান প্রায় ১৮০টি উচ্চগতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র করেছে। এ ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে তেহরান গত মঙ্গলবার রাতের হামলায় গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি করতে চেয়েছে। সেদিক দিয়ে গত এপ্রিলে চালানো ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেয়ে এবারের হামলা ছিল ভিন্ন।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!উচ্চগতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট করা ছিল চ্যালেঞ্জিং। তবে প্রাথমিক তথ্যমতে, হামলায় ইসরায়েলে কত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তা প্রকাশ করিনি দেশটি। পশ্চিম তীরে মাত্র একজনের প্রাণহানির বিষয়ে সামরিক ব্যর্থতার বিষয়টিও তুলে ধরে দেশটির কর্তৃপক্ষ। যদিও ইরানের ছোড়া কিছু ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলোর অংশবিশেষ ভূমিতে আঘাত হেনেছে।
এ বছর এর আগে ব্যবহার করা ইরানের ইমাদ ও গদর ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির ছয় গুণ গতিসম্পন্ন। এগুলো ইরান থেকে ইসরায়েলে পৌঁছাতে ১২ মিনিট সময় নেয়। এই গতি ঘণ্টায় ৪ হাজার ৬০০ মাইলের বেশি। সেখানে ইরান বলেছে, এবার তারা আরও দ্রুতগতির হাইপারসনিক ফাত্তে–২ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছিল। যেগুলোর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার মাইল।
আড়াই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের করা হিসাবে ইরানের হাতে আনুমানিক তিন হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। সংগত কারণেই বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে। তেহরান এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বড় অংশই রেখে দিতে চেয়েছে, ইসরায়েল সংকট বাড়িয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করলে সে সময় ব্যবহার করার জন্য।
মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এত বেশিসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। এ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা খুবই অত্যাধুনিক। আকাশেই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ধ্বংস করতে সেখান থেকে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত কতটা, তা–ও নিশ্চিত নয়।
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট করার জন্য সাধারণত দূরপাল্লার ইউএস–ইসরায়েলি অ্যারো ৩ ও অ্যারো ২ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা প্রথম ব্যবহার করা হয় ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধে। এ ব্যবস্থার সঙ্গে মাঝারি পাল্লার ডেভিড স্লিং প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও সক্রিয় করা হয়। তুলনামূলক বেশি পরিচিত আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করা হয় স্বল্পপাল্লার সমরাস্ত্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে, প্রায়ই গাজা থেকে হামাস যেসব রকেট নিক্ষেপ করে, সেগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে।
গত এপ্রিলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব স্টাফের অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, অ্যারো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা একবার সক্রিয় করলে ৩৫ লাখ ডলার ব্যয় হয়। আর ডেভিডর স্লিংয়ের ক্ষেত্রে এ ব্যয়ের পরিমাণ ১০ লাখ ডলার। ১০০ বা তার চেয়ে বেশিসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয়। যদিও ইরানের প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ৮০ হাজার পাউন্ড বা তার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়।
এবার ইরানের কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত এপ্রিলে ইরানের নিক্ষেপ করা ১২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্য মাত্র ৯টি আঘাত হেনেছিল। তাতে দুটি বিমানঘাঁটিতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সামরিক পরিভাষার ক্ষেত্রে, ওই হামলাও কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল।
এপ্রিলে ইরান তিন শতাধিক ড্রোন এবং ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। তবে মঙ্গলবার তারা তুলনামূলক ধীরগতির ড্রোন ব্যবহার করে। এবার তারা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হেনেছে
ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর ঘাঁটিগুলোর ভেতরে ইরানের নিক্ষেপ করা কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরদিন বুধবার (২ অক্টোবর) ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এসব তথ্য জানিয়েছে। তবে কোন কোন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে তা স্পষ্ট করেনি ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, গতকাল মঙ্গলবার ইরানের হামলার সময় বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ঘাঁটিগুলোর ভেতরে পড়েছে। এসব ঘাঁটিতে থাকা ইসরায়েল বিমানবাহিনীর কোনো অবকাঠামো বা শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কেউ হতাহত বা বিমানের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি বলে ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে।
গতকাল ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড ও ইসরায়েলি বাহিনীর তৎপরতায় এগুলোর বেশির ভাগই আকাশে ধ্বংস হয়। কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করা হচ্ছে। ইন্টারনেটে ইসরায়েলিদের পোস্ট করা বিভিন্ন ছবিতে দেশটির মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জায়গায় গভীর গর্ত হতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলে কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে অধিকৃত পশ্চিম তীরে একজন নিহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ইরান বলেছে, সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে তারা এ হামলা চালিয়েছে। তবে একটি ইসরায়েলি স্কুলে অন্তত একটি রকেট আঘাত হেনেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের হামলাকে ‘অকার্যকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।