সাইফুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এ অঞ্চলের কোনো মাদরাসার অবকাঠামোগত উন্নয় না হলেও ভাগ্য উন্নয়ন করেছে কিছু প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও অসাধু শিক্ষকরা। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ শহরের কোলা রোডে অবস্থিত ‘আবুবক্কর বিশ্বাস মোকসেদ আলী মহিলা আলিম মাদরাসা’। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি মাসের অধিকাংশদিন মাদরাসায় উপস্থিত না থেকেও তুলেছেন বেতন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে গড়েছেন অবৈধ সম্পদ। এতোসব অপকর্মের রক্ষাকর্তা ছিলেন এ অঞ্চলের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। কেননা অপকর্মের মাধ্যমে নজরুল ইসলামের বাগিয়ে নেওয়া অর্থের একটা অংশ ভাগ পেতেন আনার। নজরুল ইসলাম ১৬ বছরে বিলাশবহুল বহুতল ভবনের মালিক হলেও, করতে পারেনি মাদরাসাটির অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!সরেজমিনে ঐ মাদরাসায় একাধীকবার গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে একাধিক ব্যক্তি বলেন নিজ কর্মস্থলে না থাকলেও কালিগঞ্জ উপজেলার প্রায় সব মাদরাসার অফিসিয়াল দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এদিকে সকল মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন করানো, স্কেল পরিবর্তন করানো, কর্মচারী নিয়োগ, সভাপতির সাথে দেন-দরবার এবং অডিটের জন্য ঘুষের টাকা লেন-দেন সহ সকল অপকর্মের সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ উঠেছে ।
আরও অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মাদরাসার সুপাররাও টাকার বান্ডিল নিয়ে এই নজরুলের পিছু পিছু দিনরাত ঘুরতে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন করানোর জন্য মাথা পিছু প্রায় ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন তিনি।
এদিকে নিজ প্রতিষ্ঠানে তিনি কায়েম করেছেন রামরাজত্ব। জানা গেছে, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সাথে যোগসাজশ করে প্রায় ১১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ল্যাব অপারেটর পদে মেহেদী নামে একজন কে নিয়োগ দেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত আছেন তার আত্মীয় মাসুম বিল্লাহ। যার কোন নিয়োগ সার্কুলার কিংবা বৈধ কোন কাগজ-পত্র নেই। তারা দুজনেই যোগদান করেন চলতি বছরের ২০ মে ২০২৪ তারিখে।
এদিকে শরিফুল ইসলাম নামে আরো একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত আছেন। ল্যাব সহকারী পদেও নাহিদ তানভীর নামে অপর একজন কর্মরত রয়েছেন। তার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে তিন লক্ষ টাকা । এ ভাবে একই পদে একাধীক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
এই সমস্ত অবৈধ টাকায় তিনি কালিগঞ্জ শহরে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল চারতলা বাড়ি। তার নিজ গ্রামে চাষের জমি কিনেছেন প্রায় ৩০ বিঘা জমি । এলাকাবাসী জানান, দুনীর্তিবাজ এই অধ্যক্ষ এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসার কয়েকজন সুপার জানান, হুজুর নিজ হাতে সব লেনদেন করেন, কাজও ভাল বোঝেন এ কারনে ঝামেলা এড়াতে এলাকার সকল মাদরাসা সুপার তাকে গুরু মানেন। তাকে দিয়ে সব কাজ করান। তিনি প্রায় সময় ঢাকায় থাকেন,কোন ছুটির প্রয়োজন হয় না।
এদিকে ঝিনাইদহে থাকলে তিনি বিভিন্ন মাদরাসায় যান। এই মাদরাসা চালান সহকারী সুপার। তবে তার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষ যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে অঘটন।
এ বিষয়ে মহিলা আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। তিনি সব অপকর্মের দায় স্বীকার করে বলেন, পারলে সংবাদ পত্রে নিউজ করেন, আমার কিছুই হবে না।
এবিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। যদি তিনি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকেন তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা নিবো।