এম এ কবীর, ঝিনাইদহ
লুটপাট,অনিয়ম, দুর্নীতি,ক্ষমতা দখল, অব্যবস্থাপনা আর মামলাবাজদের দৌরাত্মে ঝিনাইদহের ক্রীড়াঙ্গন প্রায় ধ্বংসের পথে। এখানে বিগত সাত বছরেও একদিনের জন্য মাঠে বল গড়ায়নি ফুটবল। নেই কোন প্রতিযোগিতা। ফুটবল, ভলিবল এমনকি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজনও দীর্ঘদিন বন্ধ। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ নেতাদের পদ দখলের কামড়াকামড়িতে ঝুলে আছে ক্রিড়া সংস্থার নির্বাচন । মামলা জটিলতায় নির্বাচন না হওয়ায় ক্রীড়াসংস্থা এখন চলছে অ্যাডহক কমিটি দিয়ে। পেশাদার খেলোয়াড়দের নিস্ক্রিয়তায় জেলার একমাত্র বড় খেলার মাঠ ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামটি করছে খাঁ খাঁ। স্টেডিয়ামের সংস্কার নেই বেশ কয়েক বছর। মাঠের গ্যালারি, ড্রেসিং রুম আর ক্রিড়া সংস্থার অবকাঠামোগুলো রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ধ্বসে পড়ছে। স্টেডিয়ামের সামনে জমে আছে হাটু পানি। রয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!তথ্য নিয়ে জানা গেছে, পেশাদার খেলোয়াড়দের নিয়ে বেশ ভালই চলছি ঝিনাইদহ জেলা ক্রিড়া সংস্থা। কিন্তু বিগত ১৫ বছর আগে আওয়ামীলীগ নেতারা ক্রিড়া সংস্থা দখল করে নেয়ায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে খেলার আয়োজন। ক্লাব ভিত্তিক খেলার প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে ক্রিড়া সংস্থায় কাউন্সিলর বানানো নিয়ে যুবলীগ নেতা রাশিদুর রহমান রাসেল ও আ’লীগ নেতা জীবন কুমার বিশ্বাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধে। সেই দ্বন্দ্ব গড়ায় উচ্চ আদালতে। মামলা হওয়ায় স্টেডিয়ামে সব ধরণের প্রতিযোগিতাসহ খেলার আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়। খেলেয়াড়দের পরিবর্তে আমলাদের নিয়ে গঠিত হয় ক্রিড়া সংস্থার এডহক কমিটি। এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের মাঝে।
এদিকে খেলাধুলা বা বড় ধরণের কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন না থাকলেও ক্রিড়া সংস্থার লুটপাট থেমে নেই। ২০১৪ সালের ১০ মে থেকে ২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রিড়া সংস্থার জনতা ব্যাংক শাখায় জমা হয় মোট ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যায় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকে ক্রিড়া সংস্থার অন্য একটি একাউন্টে জমা ছিল ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের ১০ জুন দুইটি চেকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের ওই একাউন্ট থেকে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এই টাকা কোন খাতে ব্যায় দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে তার হিসাব জেলা ক্রিড়া সংস্থায় নেই। দীর্ঘদিন আভ্যন্তরীন অডিট না হওয়ায় ক্রিড়া খাতে বেশুমার লুটপাট হয়েছে এমন অভিযোগও তুলেছেন কেউ কেউ। ঝিমিয়ে পড়া ঝিনাইদহের ক্রিড়াঙ্গন নিয়ে জেলার সাবেক ফুটবলার ও বিশিষ্ট ক্রিড়া সংগঠক আহসান উদ্দীন আফাঙ্গীর জানান, ক্রিড়া সংস্থার নেতৃত্ব পেশাদার খেলোয়াড়দের হাতে ফিরিয়ে না দিলে মাঠে প্রানবন্ত পরিবেশ ফিরে আসবে না। তিনি দ্রæত মামলা নিস্পত্তি করে ক্রিড়া সংস্থার নির্বাচন দাবী করেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, ক্রিড়া সংস্থার নতুন কমিটি গঠন হলে কেবল ক্রিড়ায় প্রাণ ফিরতে পারে। এ জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুম শেষ হলে আশা করা যায় বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম আবারো খেলোয়াড়দের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পাবে।