ডেস্ক রিপোর্ট
চট্টগ্রামে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার দায়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন ও তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভ করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক হাসান আরিফ বলেন, শেখ হাসিনার সতেরো বছরের অপশাসনের দোসরদের মধ্যে ইসকন অন্যতম। আমরা লক্ষ্য করেছি ৫ আগস্টের পর থেকে ইসকন ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে ইসকন সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন আমাদের ভাই অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ।
তিনি আরও বলেন, আমরা এক সপ্তাহ আগে এই রাজু ভাস্কর্য থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চাওয়া কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিককে জাতীয় বেইমান ঘোষণা করেছিলাম। আমাদের দাবী যে সত্য ছিলো তা এই হত্যাকাণ্ডে প্রমাণ হয়ে গেলো। তারা যদি আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার কথা না বলতেন তাহলে দলটির দোসর ইসকন কোনদিন এদেশে রক্তপাত ঘটানোর সাহস করতো না।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমন্বয়ক গালীব ইহসান বলেন, আওয়ামী লীগ বার বার ইসকনসহ বিভিন্ন দল রূপে ফিরে আসবে। তাই আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে৷ এ দাবি আদায়ে ছাত্র-জনতাকে সব সময় সোচ্চার হতে হবে।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণদাস রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করে উস্কানিমূলক কথা বলেছিলেন। এ অবস্থায় সরকার বাধ্য হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। অথচ ভারত তাকে গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে।
চিন্ময়ের সঙ্গে বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মযহার সাক্ষাত করায় তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানান এ ছাত্রনেতা। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে হত্যাচেষ্টার নিন্দা জানিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, যেসব ছাত্রনেতা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে সম্মুখ সারিতে ছিলেন তাদেরকে আপনারা নিরাপত্তা দিন।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান হিন্দু জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা আমাদের বন্ধু, আমাদের ভাই। আমরা এক সঙ্গে এদেশ স্বাধীন করেছি, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করেছি। আমরা ভবিষ্যতেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা ভারতের সেবাদাস আওয়ামী লীগের এবং ইসকনের ফাঁদে পা দেবেন না। আমরা আপনাদের মন্দির পাহারা দিয়েছি, আমরা চাই আপনাদের দ্বারা আমাদের কোন মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত না হোক।
তিনি ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরকারের বলিষ্ঠ অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে অনতিবিলম্বে আওয়ামীলীগ ও ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবী করেন।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতা আরিফুল হক বলেন, শহীদ সাইফুল ইসলাম ভাই অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। অথচ প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ ও ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে ধানমন্ডি ৩২ সহ তাদের দখলকৃত সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনরুদ্ধারের দাবী করেন আরিফুল হক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনরুদ্ধার ও সংস্কারপূর্বক বিপ্লবী ছাত্র পরিষদসহ বিপ্লবকে ধারণকারী ৩৫ টি ছাত্র সংগঠনকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব জাকারিয়া কামাল বলেন, এটা বাংলাদেশ, ভারত নয়, এখানে ইসকনের কোনো কাজ নেই। তাই নিরীহ হিন্দু ভাইদের আহ্বান করব আপনারা ইসকনের হঠকারিতার ফাঁদে পা দিবেন না। আপনারা শান্তিতে থাকুন।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণদাসকে ইসকন করার জন্য নয়, বরং বারবার ভারতে সফর করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরাজিত আওয়ামী লীগ দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এই ইস্যুটিকে পূঁজি করেছে। অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে একটি পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বাংলার জনগন এই ষড়যন্ত্রে সাড়া দেয়নি।
তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা আপনার সাথে আছি। কিন্তু আপনারা যদি দায়সাড়াভাবে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে শুধু ইসকন ও আওয়ামী লীগ নয় সামনে অনেক জঙ্গি সংগঠনও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তিনি সারাদেশে চিরুনি অভিযান চালিয়ে প্রত্যেকটা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিকে গ্রেফতার করার এবং আওয়ামী লীগের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবী জানান।
মুশফিক মুহিব খান পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বিবৃতি ছাড়া আর কোন দায়িত্ব পালন করছেন না। আমেরিকার টাইম স্কয়ারে বড় স্ক্রিনে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে, এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন আমাদেরকে জানান।
বিক্ষোভে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ এবং বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ শেষে ইসকন ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।