ঝিনেদার কাগজ || Jhenedar kagoj || সত্যের আলোয় সুন্দর

২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কারা, কীভাবে করেন


ডেস্ক রিপোর্ট:

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

সাগরে নিম্নচাপের সময় বাতাসের প্রচণ্ড ঘূর্ণায়মান গতির ফলে সংঘটিত বায়ুমণ্ডলীয় উত্তাল অবস্থাকে সংক্ষেপে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। বাতাসের এই একটানা ঘূর্ণায়মান গতি যখন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছায়, তখনই এর নামকরণ করা হয়। আটলান্টিক মহাসাগর ও এর আশপাশের অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারে উঠে গেলে নিম্নচাপ ঝড়ে পরিণত হয়। আর এ সময়ই ঘূর্ণিঝড়টিকে একটি নাম দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।

ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা, ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের জন্য আগাম প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করাটাই নামকরণের প্রধান উদ্দেশ্য। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনসাধারণের কথা ভেবে তাদের সতর্কতার সুবিধার্থে নামটি নির্বাচন করা হয়। তারা যেন খুব সহজেই নামটি বুঝতে ও মনে রাখতে পারে, সেদিকে যথেষ্ট খেয়াল রাখা হয়। এতে নির্দিষ্ট অঞ্চলে সতর্কতা জারি করার সময় সহজে দুর্যোগের তীব্রতা বোঝানো সম্ভব হয়।

নামকরণের আরও একটি কারণ হচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা। একই সময়ে একাধিক ঝড় সক্রিয় থাকলে বা আগে কোনো দুর্যোগের সঙ্গে পার্থক্য করার ক্ষেত্রে আলাদা নাম সুবিধাজনক। এ সময় তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণে অনাকাক্সিক্ষত বিভ্রান্তি এড়ানো সম্ভব হয়। এমনকি ট্র্যাকিং ও পদ্ধতিগত দিক থেকে উন্নয়নসাধনের জন্যও নামকরণের বিকল্প নেই।

ছ, ট, ঢ, ণ ও ত- এই ৫টি অক্ষর বাদ দিয়ে ইংরেজি বর্ণমালার ২১টি অক্ষর ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। এগুলো সাধারণত এক বছরের জন্য পর্যায়ক্রমিকভাবে ছেলে ও মেয়েদের নাম দিয়ে নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৬ সালের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল আলবার্টো, আর পরের ২টি ছিল ‘বেরিল’।

তবে কোনো বছর যদি ২১টির বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা দেয়, তবে নামগুলোর সঙ্গে গ্রিক বর্ণমালা যুক্ত করা হয়। যেমন : হারিকেন আলফা বা বিটা।

এভাবে ৬ বছরের জন্য একত্রে অনেকগুলো নাম নির্ধারণ করে রাখা হয়। এগুলোর প্রতি ৬ বছর পর পর পুনরাবৃত্তি ঘটে। যেমন ২০০৮ সালের নামগুলো ২০১৪ সালের জন্য পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলো

তালিকা থেকে বাদ যায়। যেমন : ২০০৫ সালের ‘ক্যাটরিনা’ ২০১১ সালে পুনরাবৃত্তির সময় বাদ দিয়ে নতুন নাম রাখা হয় ‘ক্যাটিয়া’।
বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়গুলোর এই নামকরণ উত্তর ভারতীয় ঘূর্ণিঝড়ের বিধি অনুযায়ী হয়ে আসছে। এই বিধি অনুযায়ী বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হয়।

২০২০ সালে এই অঞ্চলের মোট ১৩টি দেশ থেকে ১৩টি নামসহ মোট ১৬৯টি নাম সামনের বছরগুলোর জন্য প্রকাশ করা হয়।

নামকরণের পদ্ধতি অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। ছেলে বা মেয়ের নামে হলেও এই নামগুলোর কোনোটিই নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নামকে উদ্দেশ্য করে করা হয় না। এখানে নাম নির্ধারণের সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা হয়, সেগুলো হচ্ছে-
দ্রুত যোগাযোগের সুবিধার্তে নামে অক্ষরের সংখ্যা কম হতে হবে, উচ্চারণে সহজ হওয়া দরকার, নির্দিষ্ট অঞ্চলে সুপরিচিত হতে হবে, একই নাম একাধিক অঞ্চলে ব্যবহার করা যাবে না।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেন যারা :

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা আঞ্চলিক কমিটির অধীনে মোট ৫টি আঞ্চলিক সংস্থা তাদের স্ব-স্ব অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করে। এগুলো হলো- ইএসসিএপি (ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক) বা ডাব্লিউএমও (বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা) টাইফুন কমিটি, ডাব্লিউএমও বা ইএসসিএপি প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোন, আরএ (রেজিওনাল অ্যাসোসিয়েশন) ট্রপিক্যাল সাইক্লোন কমিটি, আরএ-৪ হারিকেন কমিটি, আরএ-৫ ট্রপিক্যাল সাইক্লোন কমিটি।

ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে ১৩টি দেশ। সেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ওমান, ইরান, সৌদি আরব, ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার।

ডাব্লিউএমওর অংশ হিসেবে উত্তর ভারতীয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করে থাকে- আরএসএমসি (আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া দপ্তর), ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ওয়ার্নিং সিস্টেমস (টিসিডাব্লিউএস) ও ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি)।
এই অঞ্চলটি ভারত মহাসাগরের উত্তরে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।

বাংলাদেশে আসন্ন কিছু ঘূর্ণিঝড় :

বর্তমানে বাংলাদেশ ও এর নিকটবর্তী পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের নাম রিমাল। নামটির প্রস্তাব করে ওমান, আরবিতে যার অর্থ ‘বালি’। এটি ২০২০ সালে ওই ১৩ দেশের প্রস্তাবিত ১৬৯টি নামের একটি।
‘রিমাল’ ছাড়াও অদূর ভবিষ্যতে আসন্ন উত্তর ভারতীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামগুলো হলো- আসনা (পাকিস্তান), ডানা (কাতার), ফেঙ্গাল (সৌদি আরব), শক্তি (শ্রীলঙ্কা), মন্থ (থাইল্যান্ড), সেনিয়ার (সংযুক্ত আরব আমিরাত) ও দিত্ত্ব (ইয়েমেন)।

পরিশেষ :

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের পেছনে মূল কারণ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে জনসাধারণের সতর্কতা। এই উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে বাতাসের গতিবিধি ও আসন্ন দুর্যোগ নিয়ে গবেষণা করা হয়ে থাকে। এই গবেষণায় ঝড়ের তীব্রতা এবং একাধিক ঝড়ের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে এগুলোর নামকরণ।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির এই কার্যক্রম ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে আগাম সচেতনতারই নামান্তর। এর ধারাবাহিকতায় স্থানীয় নিরাপত্তা জোরদারের মাধ্যমে দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

আরও পড়ুন

মিয়ানমারে লড়াইয়ের জন্য জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে লড়াইয়ের জন্য জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গারা

অনুবাদ রয়টার্স থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী বসতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস। ২০১৭ সালে বৌদ্ধ অধ্যুষিত মায়ানমার সরকার দেশটির

যবিপ্রবির ভিসি অধ্যাপক ড. এম মজিদের সংবর্ধণা কমিটির প্রস্তুতি সভা

হরিণাকুণ্ডুতে যবিপ্রবির ভিসি অধ্যাপক ড. এম মজিদের সংবর্ধণা কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

হরিনাকুণ্ড প্রতিনিধি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর বরেণ্য শিক্ষাবীদ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সলর অধ্যাপক ড. এমএ মজিদের সংবর্ধনা প্রদান কমিটির

মানুষের ভোটার অধিকার হরণ

‘মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি’

মোস্তাফিজুর রহমান, কোটচাঁদপুর মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি। ধর্ষণ সেঞ্চুরি করে উল্লাস করে এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি।

দরিদ্র মেধাবী ছাত্র নীরবের পাশে মানবতার হাত

দরিদ্র মেধাবী ছাত্র নীরবের পাশে মাও. আবু তালেব

বনি আমিন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ঝিনাইদহের মঙ্গলপৈতা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র সালমান ইসলাম নীরবের পড়াশোনার পথে দীর্ঘদিনের আর্থিক

কপ২৯: বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেল দরিদ্র দেশগুলো

কপ২৯: বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেল দরিদ্র দেশগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট দীর্ঘ দর-কষাকষির পর সমঝোতায় পৌঁছেছে কপ২৯। বিশ্বের ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে অভিযোজন