ডেস্ক রিপোর্ট
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসেছে। এ আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা প্রতিরোধে দলটি রাজপথে অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। সেটিকে রাজনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন দলের নেতাদের অনেকে। এই ব্যর্থতার প্রশ্নে এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্র নেতারা একে অপরকে দোষারোপের মাধ্যমে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে নেতাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, তর্কাতর্কি বা বাদানুবাদ পর্যন্ত গড়াচ্ছে।
যদিও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নেতাদের দোষারোপ বা বাদানুবাদের ঘটনাকে ছোট করে দেখার চেষ্টা করছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে দলের ভূমিকা এতটাই ভঙ্গুর ছিল যে অনেকেই তা মেনে নিতে পারছেন না, হকচকিত হয়ে পড়েছেন। এ জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে দলের দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়া এবং জনমত বিপক্ষে চলে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে সরকারের প্রতি তরুণ প্রজন্মের বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা ভাবাচ্ছে তাঁদের। দলের বিভিন্ন স্তরে আলোচনায় দল পুনর্গঠনের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, এখন ঘুরে দাঁড়াতে হলে দল পুনর্গঠনে হাত দিতে হবে। নতুবা পুরোনো মুখ ও পুরোনো নীতি নিয়ে মানুষের মন জয় করা যাবে না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ধাক্কা এলে সামলানো কঠিন হবে।
গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে জানান, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে গত চার দিন মূল্যায়ন সভা করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘গত চার দিনে আমরা যে বৈঠকগুলো করেছি, কোথাও কি হাতাহাতি, মারামারি হয়েছে? তর্ক–বিতর্ক গণতন্ত্রের প্রাণ। আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা করে। এখানে বিতর্ক হতেই পারে। যেকোনো বিষয়ে তর্ক হতেই পারে; কিন্তু কেউ তো মারামারি করেনি। কোনো হাতাহাতি হয়নি।’
দোষারোপ, উত্তেজনা, তর্কাতর্কি
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে একটি সমন্বয় সভা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজধানীর যেসব স্থানে ব্যাপক সংঘাত হয়েছে, সেসব এলাকার জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সভা করছে ক্ষমতাসীন দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের সভার পর কয়েকজন নেতাকে নিয়ে তেজগাঁও কার্যালয়ে নিজ কক্ষে বসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সে সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংঘাত, সহিংসতা প্রতিরোধে দলের ব্যর্থতা নিয়ে তর্কে জড়ান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান (কচি)। তাঁদের তর্কাতর্কি একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কিতে গড়ায়। তখন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা ওই দুই নেতাকে নিবৃত্ত করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত অন্য নেতারাও একে অপরের প্রতি বিষোদ্গারে লিপ্ত হন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন দায়িত্বশীল নেতা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দলের মধ্যে এভাবে বাদানুবাদ বা তর্কাতর্কির ঘটনা নজিরবিহীন। কিন্তু উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে নেতাদের মধ্যে সহিষ্ণুতার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরুতে আওয়ামী লীগ নেতা, জনপ্রতিনিধি ও সমর্থকদের অনেকের পরিবারের সদস্যরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এ নিয়েও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বসহ বিভিন্ন স্তরে প্রতিক্রিয়া হয়।
‘বিভেদের কারণেই দুর্বলতা’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভূমিকা না রাখার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার ১০৮টি ইউনিট কমিটির মধ্যে ২৭টি কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দলের নেতারা বলছেন, মহানগরে নেতৃত্বের বিভেদের কারণেই সাংগঠনিক অবস্থা এখন ভঙ্গুর।
গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং দলীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ সভায়ও দলের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই বৈঠকেও নেতা-কর্মীদের অনেকে দলীয় দুর্বলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। অনেকে বলেছেন, দলের পদ বাগিয়ে নিতে, সরকারি দপ্তরের ঠিকাদারি কাজ পেতে যত তৎপরতা দেখা যায়, দুঃসময়ে দলের জন্য সেই তৎপরতা থাকে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় এই ‘সুবিধাভোগীরা’ ঘর থেকে বের হননি।
এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে ব্যর্থতার দায়ভার বেশি এসেছে সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের ওপর। সংগঠনটির সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগ এতটা অজনপ্রিয়, তা ভাবনায় আসেনি। এসব নেতা কীভাবে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মুখ দেখাবেন? ওই নেতা আরও বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষ কেন অপছন্দ করছে, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও বিপদ আসতে পারে।