ডেস্ক রিপোর্ট
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!ফরিদপুরের মধুখালীতে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসা ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন আগে থেকেই নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত।
দখল, চাঁদাবাজিতে তার নাম এসেছে বারবার। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এলাকায় নিজস্ব একটি বলয় আছে তার। তাদেরকে দিয়েই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিয়ন্ত্রণ। দখলবাজিতে কেউ প্রতিবাদ করলেই চালাতেন নির্যাতন।
সালিশ করেও টাকা আদায়ের অভিযোগ মিলেছে তপনের বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের ৪ মে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাধা ও ইউএনওকে মারধরের ঘটনায় বরখাস্তও হয়েছিলেন। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে ফিরে পান পদ।
গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের একটি কালী মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়। স্কুলের টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছিল। সেজন্য শ্রমিকরা সেখানে ছিলেন।
সেখানে পিটুনিতে দুই শ্রমিকের প্রাণ যায়। তারা হলেন, উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের ২১ বছর বয়সী আশরাফুল ও তার ভাই ১৫ বছর বয়সী আশাদুল। এ ঘটনায় আহত আরও পাঁচ শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শ্রমিকদের পিটিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে।
এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ঘটনার আট দিনের মাথায় শুক্রবার ফরিদপুরের ডিসি কামরুল আহসান তালুকদার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, এই ঘটনায় চেয়ারম্যান তপন ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অজিত বিশ্বাসের সম্পৃক্ততার ‘যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে ‘। তাদেরকে ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করলে উপযুক্ত পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণাও এসেছে।
নিহত দুই ভাইয়ের বাবা শাহজাহান খানেরও অভিযোগ, এই ঘটনায় চেয়ারম্যান তপন জড়িত।
তিনি বলেন, “ঘটনার কয়েকদিন আগে আমার ছেলে আমাকে মোবাইলে জানিয়েছিল সেখানে ঝামেলা হয়েছে। স্থানীয় মেম্বার চাঁদা চেয়েছিল, এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাক বিতণ্ডা হয়। এরপরই ঘটে হামলার ঘটনা।
“প্রথমে আমার ছেলেকে মারপিট শুরু করেন চেয়ারম্যান তপন। এরপর অজিত মেম্বারসহ সবাই তাদের মারপিট করে। চাঁদা না দেওয়াতেই আমার সন্তানদের পিটিয়ে হত্যা করে।”
দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, সেখানেও চেয়ারম্যান তপনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ভিডিওতে দেখেছি তপন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই এ হামলা চালানো হয়।
চোপেরঘাট গ্রামের বাসিন্দা রিজিয়া বেগম বলেন, “তপন চেয়ারম্যান এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে গেছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম বলেন, “এর আগেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণকাজের বাধা দেন তিনি (তপন)। এ নিয়ে তার লোকজন ইউএনওর উপর হামলাও চালায়। পরে তিনি গ্রেপ্তার হন। কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবার শুরু করেন।”
চেয়ারম্যান তপন কোথায়
দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় হয় গত ২১ এপ্রিল। ১৫ ও ৪৩ সেকেন্ডের দুটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে স্কুলের কক্ষে মেঝেতে ফেলে পিটানো হচ্ছে। চেয়ারম্যান তপন ও ইউপি সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাস তাদের মারপিট করছিলেন।
ভিডিও প্রকাশের পর দুজন গা ঢাকা দেন। অথচ আগের দিন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান নিহত দুই ভাইয়ের বাড়িতে গেলে সেখানেই ছিলেন স্থানীয় চেয়ারম্যান।
দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, “চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বারসহ জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।”
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এসে ফরিদপুরের ডিসি কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন একজন স্বভাবজাত অপরাধী। কোথায় কখন কীভাবে লুকিয়ে থাকতে হয়, সেটি তিনি ভালো জানেন।”
“তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন রেখে গেছেন। এর আগে আমরা মাগুরায় তার অবস্থান শনাক্ত করি। কিন্তু যখন তাকে ধরার জন্য অভিযান চালানো হয়, তখন যশোরে পালিয়ে যান। এরপর যশোরেও তাকে ধরতে অভিযান চালানো হলেও পাওয়া যায়নি।”