সিএনএন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর গতকাল বুধবার প্রথমবার ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ওভাল অফিসে ফক্স নিউজের সঞ্চালক ও ট্রাম্প–সমর্থক শন হ্যানিটিকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে বরাবরের মতোই বেশ কিছু মিথ্যা তথ্য সামনে এনেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তিনি এসব মিথ্যা বলে আসছেন। এর মধ্যে ২০২০ সাল ও ২০২৪ সালের নির্বাচন, অভিবাসন ও ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির দাঙ্গার মতো বিষয়গুলো রয়েছে। ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারে বলা ১১টি মিথ্যা তথ্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!ক্যাপিটলে দাঙ্গা
ট্রাম্প ক্যাপিটলে তাঁর সমর্থকদের দাঙ্গার বিষয়ে মিথ্যা তথ্য আবার সামনে এনেছেন। এর মধ্যে তিনি দাবি করেছেন, হাউসের নির্বাচিত যে কমিটি এ ঘটনার তদন্ত করেছিল, তারা সব তথ্য মুছে দিয়েছে। দুই বছর আগের ওই ঘটনার কোনো তথ্য তারা সংরক্ষণ করে রাখেনি। তারা যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছিল, তার কোনো সত্যতা ছিল না। ফ্যাক্টচেক ডটওআরজির তথ্য অনুযায়ী, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই কমিটি তাদের ৮০০ পাতার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ১৪০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণও রেখেছিল।
পেলোসির সংশ্লিষ্টতা
ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, সাবেক হাউস স্পিকার ন্যানসি পেলোসি স্বীকার করেছেন, ট্রাম্প তাঁকে ১০ হাজার সেনা দিয়ে ৬ জানুয়ারির আগে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন। এ–সংক্রান্ত ফুটেজ পেলোসির মেয়ের কাছে রয়েছে। কিন্তু ফুটেছে এ–সংক্রান্ত কোনো বিষয় নেই। পেলোসি কখনো স্বীকার করেননি, ট্রাম্পের ১০ হাজার সেনা পাঠানোর প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বারবার অস্বীকার করেছেন ট্রাম্পের এমন কোনো প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করেননি।
নির্বাচন
গত বছরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন ট্রাম্প। তিনি বলছেন, তিনি ৩৬ শতাংশ তরুণ ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন জরিপ সে কথা বলছে না। সিএনএনের বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় কমলা হ্যারিসের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলেন ট্রাম্প।
২০২০ সালে ভোট
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট প্রাপ্ত ভোট নিয়েও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন ট্রাম্প। তিনি বলে আসছেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে সাড়ে ৭ কোটি ভোট পেয়েছেন। তবে এ তথ্য ঠিক নয়। ট্রাম্প মোট পেয়েছিলেন ৭ কোটি ৪২ লাখ।
নির্বাচনের বৈধতা
ট্রাম্পের সমর্থকেরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বৈধ হয়নি বলে ক্যাপিটল ভবনে যে হামলা করেছিল, ট্রাম্প তার পক্ষে সাফাই গাইছেন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর সমর্থকেরা জানতেন নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছিল। তারা ভোটের জন্য বিক্ষোভ করছিল। ট্রাম্প ওই দাঙ্গাকে শুধু বিক্ষোভ বলেছেন। তাঁর এই বর্ণনা মিথ্যা।
ডেমোক্র্যাট ও নির্বাচন
ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনকে নির্বাচনী প্রতারক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন শুধু প্রতারণা করতে পারে। কিন্তু মার্কিন নির্বাচনে সাধারণত স্বচ্ছ ও নিরাপদ হয়। ২০২০ সালের এ স্বচ্ছ নির্বাচনে বাইডেন ট্রাম্পকে পরাজিত করেন।
অভিবাসন
অভিবাসন নিয়েও একাধিক মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বাইডেন প্রশাসনের অধীনে অভিবাসী সংখ্যার মিথ্যা তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে ২ কোটি ১০ লাখ অভিবাসী ঢুকেছে। কিন্তু এ তথ্য সঠিক নয়। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ও সংখ্য ১ কোটি ১০ লাখ।
কারাগার
অভিবাসনের পাশাপাশি কারাগার ও মানসিক প্রতিষ্ঠান নিয়েও মিথ্যা তথ্য সামনে এনেছেন ট্রাম্প। তিনি একাধিকবার দাবি করেছেন, অনেক দেশ তাদের কারাগার খালি করে যুক্তরাষ্ট্রে লোক ঢুকিয়েছে। তিনি এ ক্ষেত্রে ভেনেজুয়েলার দিকে ইঙ্গিত করেন। কিন্তু ট্রাম্পের এ দাবির কোনো সত্যতা নেই। তাঁর নিজের নির্বাচনী প্রচারের সময়েও এ ধরনের দাবি ধোপে টেকেনি।
কঙ্গো
ট্রাম্প কঙ্গোকে নিয়েও এ ধরনের মিথ্য দাবি করে আসছেন। তিনি দাবি করেন, কঙ্গো তাদের কারাগার খালি করে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দীদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। কঙ্গো দাবি করেছে, এ দাবির কোনো ভিত্তি নেই।
ইউক্রেন
ইউক্রেন ঘিরে ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে মিথ্য তথ্য তুলে ধরে আসছেন। ২০১৯ সালে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ফোন করে বাইডেনের বিষয়ে তদন্ত করতে বলেছিলেন। ট্রাম্প দাবি করেন, অ্যাডাম স্কিফ নামের ক্যালিফোর্নিয়ার এক ডেমোক্র্যাট সদস্য এ গল্প ফেঁদেছিলেন। এরপর এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র দপ্তর তাঁর কথা রেকর্ড করে প্রচার করে। কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির কোনো ফোনালাপ এখনো ফাঁস হয়নি।
আয়কর কমানো
ট্রাম্প বরাবরের মতো করছাড় নিয়ে মিথ্যা দাবি করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি করছাড় দিয়েছিলেন তাঁরাই। সেটা ২০১৬ সালে তাঁর প্রথম দফার শাসনের সময়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এ দাবি মিথ্যা। ২০১৭ সালে তিনি যে কর কমিয়েছিলেন, তা ইতিহাসের সবচেয়ে কম ছিল না।