ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
২০১৬-১৭ সালে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর পুরো ঝিনাইদহের ন্যায় কালীগঞ্জ অঞ্চলেও ঘটেছিল বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের বেশ কয়েকটি ঘটনা। রাজনৈতিক দ্বন্দের পাশাপাশি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণেও কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনই এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে কালীগঞ্জের বলিদা পাড়া গ্রামের মো. সাজ্জাদ আলী বিশ্বাসের বাড়িতে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!২০১৭ সালে কালীগঞ্জের রাড়ীপাড়া গ্রামের একটি জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে আদালতে মো. আব্দুল আলীমের করা একটি মামলা থেকে জানা যায়। মামলায় উল্লেখ্য আব্দুল মাজিদের হত্যার আসামীরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর হওয়ায় ঘটানার পর পর মামলা দায়ের সম্ভব হয়নি। এমনকি হত্যার শিকার আব্দুল মাজিদের লাশের ময়নাতদন্ত না করেই দ্রুত দাফন-কাফন কারার জন্য চাপ দেয় বলে আদালতে অভিযোগ করেছেন মামলাকারী আব্দুল আলীম।
দেরিতে মামলা করার বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল আলীম বলেন, ‘মামলা করার জন্য একটি আবেদনপত্র নিয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের নিকট গেলে তারা মামালা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। আসামীরা তৎকালীন ঝিনাইদ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের দোসর হওয়ায় থানা পুলিশকে মামলা নিতে নিষেধ করা হয়। মামলা করতে আমি ও আমার পরিবার থানার ভীতরে থাকা অবস্থায় একদল সাদা পোশাকের পুলিশ পরিচয়ে আমাকে বাহিরে বের করে মামলা না করার জন্য হুমকি দেয়। আমার কলার ধরে হুমকি দেয় মামলা করলে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবে। এমনকি তৎকালীন এমপি আনার আমাকে বলেন ‘কালীগঞ্জে থাকতে হলে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চুপ থাকতে হবে, কোনো মামালা করা যাবে না’। যার কারণে মামলার জন্য আদালতেও ঘটনার পরপর মামলা করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া সে সময় মামলা করলে আমাদের জীবন-জীবিকার ওপর আঘাত আসার আশাঙ্কা ছিল। এমনকি কালীগঞ্জে আমাদের পক্ষে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব ছিল না।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মো. আব্দুল আলীম এ বছর গত ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে রাড়ীপাড়া বর্তমান বলিদাপাড়া গ্রামের মো. সাজ্জাদ আলী বিশ্বাস, তার ছেলে মো. সুমন এবং তৃতীয় আসমী গুটিয়ানীগ্রামের আনোয়ার লস্কারের ছেলে মো. মিজানুর রহমান এছাড়া অজ্ঞাত ৩ থেকে ৪ জনের বিরুদ্ধে দ. বি. আইনের ৩০২/৩৪ ধারায় বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কালীগঞ্জ আমলী আদলতে মামলা করেছেন।
মামলা থেকে জানাযায়, মামলার বাদী পিতার সঙ্গে আসামীদের জমি সংক্রান্ত দীর্ঘ দিনের বিরোধ চলে আসছিল। আসামীরা অত্যন্ত চতুর, পরসম্পদ লোভী, খুনি প্রকৃতির লোক হওয়ায় বাদীর ভাইকে খুন করতে দ্বিধাবোধ করেনি। মামলার প্রধান আসমী মো. সাজ্জাদ আলী বিশ্বাস বাদী মো. আব্দুল আলীমের চাচাত চাচা ও দ্বিতীয় আসমী মো. সুমন চাচাত ভাই হওয়ায় তাদের সেঙ্গে বাদী সাক্ষীরা ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতেন। আসামীদের কালীগঞ্জ শহরে একটি বাড়ি আছে। এ বাড়ির নিচ তলার পশ্চিম পাশের ফ্লাটে বাদীর বড় ভাই আব্দুল মজিদ ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। একই সাথে কালীগঞ্জ বাজারে ঔষধের ব্যবসা করতেন। বাদীর বড় ভাই আব্দুল মাজিদ আসামী মো. সাজ্জাদ আলী বিশ্বাস ও তার ছেলে মো. সুমনের কাছে পাওনা সম্পত্তি দাবি করলে নানা রকম ভয় ভীতি ও হত্যার হুমকি দিতেন। কিন্তু আসামীরা বাদী পক্ষের আত্মীয় হওয়ায় তাদের এ হুমকিতে তেমন গুরুত্ব দেয়নি।
২০১৭ সালের ৫ মার্চ বাদীর বড় ভাই কালীগঞ্জ বাজার থেকে প্রতি দিনের মতো কর্মস্থল দুপুরে খাওয়ার জন্য বাসায় যান। সন্ধ্যার সময় আমলার প্রধান সাক্ষী বাদীকে জানায়, তোমার বড় ভাই মোবাইল ধরছে না, কোথায় আছে খোঁজ নাও। পিতার কথা শুনে সন্দেহ হলে বাদী সাক্ষীদের নিয়ে বড় ভাইকে খোঁজ করতে আসামীদের ঠিকানায় গিয়ে গেট খোলা পাই এবং ভিতরের পশ্চিম দিকের সরু পথটি খোলা এবং ভাইয়ের ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পায়। বাদী এবং মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী মো. আব্দুস সবুর দরজা ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়। তখন উভয়ের বড় ভাই আব্দুল মাজিদ পশ্চিমের রুমে মেঝেতে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। বাদী এবং অন্যসাক্ষীরা আব্দুল মাজিদকে ওলট পালট করে দেখতে পান লাশের ঘাড়ে দড়ির দাগ, মুখ পেচে ধরার দাগ এবং দু’পায়ের গোড়ালী দড়ি দিয়ে বাঁধার দাগ রয়েছে। বাদী এবং সাক্ষীরা দ্রুত চিকিৎসার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসকরা আব্দুল মাজিদকে মৃত ঘোষনা করেন। নিহতের পিতা- মাতাকে সংবাদ দিলে পিতা-মাতাসহ বাদীর অন্যান্য আত্মীয় স্বজন নিযয়ে হাসপাতালে আসে। বাদী এবং সাক্ষীরা নিহত আব্দুল মাজিদকে ময়না তদন্তের জন্য কালীগঞ্জ থানায় সংবাদ দিলে তৎকালীন ক্ষমতাসীন মহলের নির্দেশে ময়না তদন্ত এবং সুরতহাল করা সম্ভব হয়নি। ক্ষমতাসীনদের নির্দেশে বাদীর মৃত. ভাইকে দ্রুত কাফন-দাফন করতে বাধ্যকরা হয়।