ডেস্ক রিপোর্ট
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে বিরোধীদের সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর দায়ে ৫০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও ৯৮টি পেজ বন্ধ করে দিয়েছে মেটা। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিএনপি এবং দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হতো।
‘প্রতিপক্ষের প্রতি হুমকি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা এই বিষয়টি তুলে ধরেছে। গত ২৯ মে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশ থেকে ‘সংঘবদ্ধ অসত্য আচরণ’ (কো–অর্ডিনেটেড ইন–অথেনটিক বিহেভিয়ার) করার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে তারা।
সংঘবদ্ধ অসত্য আচরণ হচ্ছে, কোনো একটি লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে জনগণকে বিভ্রান্ত করার সমন্বিত চেষ্টা। যেখানে ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়। এসব ভুয়া অ্যাকাউন্টের পেছনের ব্যক্তিরা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন।
মেটা বলছে, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের পেছনে জড়িত ব্যক্তিরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখত। একই সঙ্গে ওই ব্যক্তিরা যেভাবে কাজটি সমন্বয় করত, সেটিও গোপন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পেছনের ব্যক্তিদের লিংক (যুক্ততা) কোথায়, সেটি মেটার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। মেটা বলছে, জড়িত ব্যক্তিরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন বা সিআরআইয়ের (আওয়ামী লীগের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান) সঙ্গে যুক্ত।
তবে মেটার প্রতিবেদনের বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত গতকাল শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে বলেন, ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর পেছনের ব্যক্তিরা কীভাবে আওয়ামী লীগ ও সিআরআইয়ের সঙ্গে যুক্ত, তা মেটা উল্লেখ করেনি। তারা যে কারণগুলোর কথা বলেছে, সেগুলোর পক্ষে সুস্পষ্ট কোনো তথ্যও নেই। প্রতিবেদনটি স্ববিরোধী। আওয়ামী লীগের সমর্থক বিএনপির দুর্নীতি নিয়ে তো কথা বলবেই। কোন ব্যাপারটি অসত্য, সেটা মেটা উল্লেখ করেনি।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত যেসব অপপ্রচার চালায়, সেগুলো কি মেটা পায়নি? তিনি বলেন, এই প্রতিবেদন মেটা করেনি। এই প্রতিবেদন তৈরির পেছনে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা জড়িত। বাংলাদেশ থেকে ব্যক্তিবিশেষ এটা করে মেটাকে পাঠিয়েছে। মেটার উচিত এর বিরুদ্ধে তদন্ত করা। আওয়ামী লীগ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সব ধরনের অপতথ্য ও গুজবের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান রয়েছে।
মেটা বলছে, ওই নেটওয়ার্ক বাংলা ও ইংরেজিতে পোস্ট দিত। সংবাদ, সাম্প্রতিক ঘটনা, নির্বাচন, বিএনপির সমালোচনা, বিএনপির দুর্নীতির অভিযোগ এবং নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতায় বিএনপির ভূমিকার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের পক্ষে মন্তব্যসহ পোস্ট করা হতো।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) জন্য করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘবদ্ধ অসত্য আচরণ করায় মেটার নীতি লঙ্ঘনের দায়ে বাংলাদেশ থেকে ৫০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং ৯৮টি পেজ সরানো হয়েছে। এই সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ থেকেই তৈরি এবং স্থানীয় মানুষদের লক্ষ্য করে প্রচার চালাচ্ছিল। এদের ফলোয়ার (অনুসারী) ছিল ৩৪ লাখের বেশি। প্রচার চালানোর জন্য তারা ফেসবুকে বিজ্ঞাপনও দিত।
মেটা বলছে, এ ধরনের কার্যকলাপের পেছনে থাকা ব্যক্তিরা ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করত। যার মধ্যে কিছু অ্যাকাউন্ট বা পেজ মেটার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে শনাক্ত হয় এবং তা নিষ্ক্রিয় করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নাম ব্যবহার করেও কিছু পেজ তৈরি করা হয়েছিল। এসব পেজ থেকে বিএনপিবিরোধী পোস্ট দেওয়া হতো।
বাংলাদেশভিত্তিক নেটওয়ার্কটি ফেসবুকের পাশাপাশি অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও সক্রিয় বলে উল্লেখ করেছে মেটা। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকাটিভিডটনেট, বিএনপিপারা ডটকম, বিডিপলিটিকো ডটকম, বিডিপলিটিকোডটওআরজি, বাংলানিউজব্যাংকডটকম, বিডিপারসপেক্টিভসডটকম, বাংলাদেশটাইমস ৩৬০ ডটকম, লন্ডনবাংলানিউজডটকম, বিডিঅ্যানালিটিকাডটকম, বিএনপিনিউজডটনেট, বিডিসারকাজমডটনেট, খামবাসটারডটনেট, নিউজ ৩৬০ ডটকম, নিউজবাংলাদেশডটওআরজি।
এই নেটওয়ার্কের এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্ট হচ্ছে ‘টুইটারডটকম/বিডি_পলিটিকো’ এবং টুইটারডটকম/তন্ময়বুয়েট। টেলিগ্রাম চ্যানেলটি হচ্ছে, ‘টিডটমি/বিএনপিপারা’।
এ ছাড়া যেসব ইউটিউব চ্যানেলের নাম উল্লেখ করেছে মেটা, সেগুলো হচ্ছে ঢাকা টেলিভিশন, বিএনপিপারা, বিডিপলিটিকো, হাইপারজসিম, বিএনপিনামা ৪৩৪, বাংলাপলিটিক্স।
টিকটক অ্যাকাউন্ট দুটি হচ্ছে বিএনপিপারা এবং বিএনপিনিউজবিডি।
টুইটার অ্যাকাউন্টে যে তন্ময়ের নাম উল্লেখ করেছে মেটা, তিনি আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সমন্বয়ক। সংঘবদ্ধ অসত্য আচরণের যে নেটওয়ার্ক, সেখানে নাম আসার বিষয়ে তন্ময় আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন।
২০১৮ সালেও অ্যাকাউন্ট সরায় মেটা
অবশ্য এবারই প্রথম নয়। বাংলাদেশ থেকে এর আগেও ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট সরিয়েছিল মেটা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ফেসবুক থেকে বাংলাদেশের ৯টি পেজ ও ৬টি অ্যাকাউন্ট সরানো হয়। ওই সব পেজ থেকে সরকারের পক্ষে এবং বিরোধীদের বিপক্ষে নিউজ পোস্ট করা হতো। মেটা তদন্ত করে দেখেছিল, ওই কার্যকলাপগুলোর সঙ্গে জড়িতরা ছিল সরকার–সংশ্লিষ্ট।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক সুমন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেটা হয়তো নিজেদের অ্যালগরিদম ব্যবহার করে জানতে পারে ভুয়া অ্যাকাউন্টের পেছনে কারা আছে। তবে রাজনৈতিক বা সামাজিক উদ্দেশ্য তাদের থাকে না। সারা বিশ্বেই ক্ষমতাসীনেরা এ ধরনের (বিভ্রান্তি ছড়ানো) প্রচারের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে।’