বনি আমিন, কালীগঞ্জ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় এক মসজিদের ইমামকে অপহরণের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার বাকুলিয়া পশ্চিম পাড়ার মাহফিল থেকে ফেরার পথে অপহরণকারীরা তাকে জোরপূর্বক একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। মুক্তিপণ আদায়ের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তিনি এবং তার পরিবার এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!ভুক্তভোগী আশরাফুল ইসলাম (২২) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের একটি সরকারি আবাসন এলাকার মসজিদের ইমাম। তিনি জানান, মাহফিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস তার পাশে থামে। ভেতর থেকে কয়েকজন তাকে নাম জিজ্ঞেস করে এবং হঠাৎই টেনে-হিঁচড়ে গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়।
গাড়ির ভেতরে ঢুকেই তিনি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। তার বর্ণনায়, “গাড়িতে প্রবেশ করার পরই আমি আরেক ব্যক্তিকে মেঝেতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। গাড়িতে থাকা অন্যরা তার শরীরের ওপর পা তুলে বসে ছিল। ব্যক্তিটি কোনো নড়াচড়া করছিল না। সে জীবিত ছিল নাকি মৃত, তা নিশ্চিত নই। তবে তাকে দেখে মনে হয়েছে, তিনি হয়তো মারা গেছেন।”
অপহরণকারীরা আশরাফুলকে যশোরের একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে একটি ঘরে আটক রাখা হয়। আশরাফুল বলেন, “সেই ঘরে আমি ছাড়াও আরও কয়েকজন ব্যক্তি বন্দি অবস্থায় ছিল। তারা আমার মতোই অপহরণের শিকার। তাদের অনেকের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।”
পরবর্তীতে অপহরণকারীরা আশরাফুলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ভুক্তভোগীর বাবা শাহাজান আলী জানান, “ছেলে আমাকে ফোন করে জানায়, তাকে মুক্তি পেতে টাকা দিতে হবে। অনেক দরদাম করে আমি ২০ হাজার টাকা একটি বিকাশ নম্বরে পাঠাই। তারপর তারা আমার ছেলেকে ছেড়ে দেয়।”
আশরাফুলের ভাষ্যমতে, অপহরণকারীরা তাকে উলঙ্গ করে মারধর করে এবং সেই সময় ভিডিও ধারণ করে। তারা ভয় দেখায়, “যদি বিষয়টি পুলিশ বা সাংবাদিকদের জানাস, তাহলে তোকে মেরে ফেলব। তোর ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেব।” এসব হুমকির কারণে তিনি এখনো আতঙ্কে রয়েছেন এবং থানায় জিডি করতে ভয় পাচ্ছেন।
অপহরণের পর থেকে আশরাফুল এবং তার পরিবার চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। তার বাবা শাহাজান আলী বলেন, “আমার ছেলেকে যেভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তা অকল্পনীয়। আমি এই ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং সুবিচার চাই। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”
স্থানীয়দের মতে, এমন ঘটনা পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। একই ধরনের অপহরণের শিকার অন্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। বিষয়টির দ্রুত এবং সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর হস্তক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সবাই।
এ ঘটনাটি শুধু একটি ব্যক্তির ওপর নির্যাতন নয়, বরং তা সমাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি বড় ধরনের প্রশ্নও তুলে ধরছে।