ডেস্ক রিপোর্ট
এবারের নির্বাচনে একটা প্রধান বিষয় গর্ভপাত প্রশ্নে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা। গর্ভপাত প্রশ্নে যে আইনি নিশ্চয়তা আমেরিকার নারীরা অর্ধশতক ধরে ভোগ করেছেন, ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক সিদ্ধান্তে তা বাতিল করেন। ট্রাম্প গর্ব করে বলেছিলেন, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ শুধু তাঁর জন্যই সম্ভব হয়েছে, কারণ তিনি সুপ্রিম কোর্টে এমন তিনজন রক্ষণশীল বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়েছেন, যাঁরা গর্ভপাতবিরোধী। রাজনৈতিকভাবে এই আইনি বিজয় যে তাঁর জন্য গলার কাঁটা হবে, সে কথা বুঝতে ট্রাম্পের বেশি সময় লাগেনি।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!তিনি জানেন, নিজের অতি-অনুগত রক্ষণশীল ও খ্রিষ্টপন্থীদের কাছে জনপ্রিয় হলেও দেশের অধিকাংশ নারী ও পুরুষ গর্ভপাতের অধিকার সংরক্ষণের পক্ষে। এখন নির্বাচনের আগে আগে তিনি সুর বদলের চেষ্টা করছেন, কিন্তু তাতে চিড়ে ভিজবে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই।
২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে গর্ভপাতের প্রশ্নটি ব্যবহার করে ট্রাম্প-সমর্থিত ‘লাল ঢেউ’ ঠেকানো গিয়েছিল। কমলা আশা করছেন, এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এই আশাবাদ যে ভিত্তিহীন নয়, জনমত জরিপ থেকে তার বিস্তর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ৫০.৫০ শতাংশ নারী। মোট ভোটারের হিসাবেও তাঁরা পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে (৫৩ শতাংশ)। তার চেয়ে বড় কথা, পুরুষদের তুলনায় নারীরা অধিক হারে ভোট দিয়ে থাকেন। পুরুষদের ভোট দেওয়ার গড় হার যেখানে ৬৫ শতাংশ, সেখানে নারীদের ভোট প্রদানের হার প্রায় ৭০ শতাংশ।
গর্ভপাত চলতি নির্বাচনের অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে ওঠায় স্বাভাবিকভাবেই নারী ভোটাররা, বিশেষত শিক্ষিত, শহুরে ও শহরতলির নারীরা কমলার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। অধিকাংশ জরিপ অনুসারে, পূর্বেকার বছরগুলোর তুলনায় এবার ‘জেন্ডার গ্যাপ’ ১৬ শতাংশ, যা আগের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে যাবে। তবে কোনো কোনো দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে (যেমন পেনসিলভানিয়া), ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এ কথা ঠিক, পুরুষ ভোটার, বিশেষত শ্বেতাঙ্গ ও কম শিক্ষিত পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন বেশি। এই গ্রুপের ভোটারদের মধ্যে কমলার তুলনায় ট্রাম্প ৯-১০ শতাংশ হারে এগিয়ে। অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করেন, চলতি জরিপ যদি ঠিক হয়, তাহলে শুধু নারী ভোটের সাহায্যেই কমলার পক্ষে পুরুষ ভোটারদের সঙ্গে তাঁর এই ফারাক কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
ট্রাম্প গর্ব করে বলেছিলেন, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ শুধু তাঁর জন্যই সম্ভব হয়েছে, কারণ তিনি সুপ্রিম কোর্টে এমন তিনজন রক্ষণশীল বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়েছেন, যাঁরা গর্ভপাতবিরোধী। রাজনৈতিকভাবে এই আইনি বিজয় যে তাঁর জন্য গলার কাঁটা হবে, সে কথা বুঝতে ট্রাম্পের বেশি সময় লাগেনি।
উদাহরণ হিসেবে পেনসিলভানিয়ার কথা ভাবা যাক। নতুন জরিপে দেখছি, মিশিগান ও উইসকনসিনে কমলা ২ শতাংশ বা তার চেয়ে অধিক ব্যবধানে এগিয়ে। কিন্তু ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হলে তাঁকে পেনসিলভানিয়ার ১৯টি ইলেকটোরাল ভোট কবজা করতেই হবে। এই অঙ্গরাজ্যে নারীদের মধ্যে ট্রাম্পের তুলনায় কমলার সমর্থন ১২ শতাংশ বেশি, ৫৫ শতাংশ বনাম ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন ৫৪ শতাংশ, কমলার ৪৪ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকে ভোটের প্রকৃত হিসাবটি পাওয়া যাবে না। সে জন্য দেখতে হবে এখানে মোট ভোটার কত এবং তারা কী হারে ভোট দেয়। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক নির্বাচনী বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২০ সালে যাঁরা ভোটে অংশগ্রহণ করেন, তার ৫৩ শতাংশ নারী এবং ৪৭ শতাংশ পুরুষ। মোট প্রদত্ত ভোট গুনে ব্রুকিংস জানাচ্ছে, এ বছরের নির্বাচনেও যদি নারী ও পুরুষ গতবারের হারে ভোট দেন, তাহলে ট্রাম্পের তুলনায় কমলা ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৯৪ অধিক ভোট পাবেন। ২০২০ সালে জো বাইডেন এই অঙ্গরাজ্যে মাত্র ৮১ হাজার ৬৬০ ভোটে জিতেছিলেন।
অপর দুই দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য মিশিগান ও উইসকনসিনেও কমলা নারী-পুরুষ অনুপাতে বেশ ভালো ব্যবধানে এগিয়ে। মিশিগানে এই হিসাব ৫৬: ৫২ ও উইসকনসিনে ৫৬: ৫৩, কমলার পক্ষে।
আগাম ভোটে অধিক নারী
কমলার জন্য আরও একটি সুখবর রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ কোটি ৮০ লাখ মানুষ আগাম ও ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন। এনবিসির হিসাব অনুসারে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের ভোট পড়েছে ১০ শতাংশ বেশি। বেশি নারী ভোট মানে কমলার বাক্সে অধিক ভোট, সে কথা মাথায় রেখে ট্রাম্পের অন্যতম সমর্থক চার্লি কার্ক এক্স বা টুইটারে উদ্বিগ্ন হয়ে লিখেছেন, মেয়েরা অনেক বেশি হারে ভোট দিচ্ছেন। এভাবে যদি পুরুষ ভোটাররা ঘরে বসে থাকেন, তাহলে নির্ঘাত কমলাই প্রেসিডেন্ট হবেন।
আট বছর আগে হিলারি ক্লিনটন জয়ের মুখে দাঁড়িয়েও পরাস্ত হয়েছিলেন। ট্রাম্পের সেই বিজয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের অনেকেই লজ্জিত হয়েছিলেন। এবার আরেক সুযোগ এসেছে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এই প্রজাতন্ত্রে প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার। মোটেই বিস্মিত হব না যদি নারী ভোটারদের সমর্থনেই সে বিজয় অর্জিত হয়। নারী ভোট হতে পারে কমলার ‘ট্রাম্প কার্ড’।