প্রযুক্তি ডেস্ক
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি লাভ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি চীনের গবেষকরা দাবি করেছেন, দুটি জনপ্রিয় লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) নিজেদের প্রতিলিপি বা ক্লোন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এআইয়ের এই সক্ষমতা ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!গবেষকরা বলছেন, মানুষের সাহায্য ছাড়াই এআইয়ের নিজের প্রতিলিপি তৈরি করার ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এই ক্ষমতা এআইকে মানবজাতির চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান করে তুলতে পারে। এটি অনিয়ন্ত্রিত এআইয়ের প্রথম ইঙ্গিত হতে পারে। ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ‘এআরএক্সআইভি’-এ এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
চীনের ফুদান ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই গবেষণার জন্য মেটা ও আলিবাবার তৈরি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করেছেন। তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এআই মডেলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে কি না এবং মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় কি না। ১০টি পরীক্ষার মধ্যে দুটি এআই মডেল যথাক্রমে ৫০ শতাংশ ও ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের কার্যকর প্রতিলিপি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এই ফলাফল এআইয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জনের ইঙ্গিত দেয়।
তবে এই গবেষণা এখনো পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়নি। তাই অন্যান্য গবেষণায় একই ফলাফল পাওয়া যাবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, গবেষণার এ ফলাফল মানবসমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হতে পারে। তারা আধুনিক এআই সিস্টেমের সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ‘রোগ এআই বা দুর্বৃত্ত এআই’-কে একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি হিসেবে দেখছেন। রোগ এআই বলতে বোঝানো হয় এমন স্বায়ত্তশাসিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে, যা নিজের প্রয়োজনে মানবস্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক প্রজন্মের লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল-সমৃদ্ধ এআই, যা ‘ফ্রন্টিয়ার এআই’ নামে পরিচিত, রোগ এআইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
ফ্রন্টিয়ার এআই বলতে এমন এআই সিস্টেম বোঝানো হয়, যা সর্বশেষ প্রজন্মের এলএলএমের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এগুলো ওপেনএআইয়ের জিপিটি-৪ বা গুগলের জেমিনাইয়ের মতো প্রোগ্রাম পরিচালনার সক্ষমতা রাখে।
গবেষণায় মেটার লামা ৩১-৭০ বি-ইনস্ট্রাক্ট মডেল এবং আলিবাবার কিউওএন ২.৫-৭২ বি-ইনস্ট্রাক্ট মডেল ব্যবহার করা হয়েছে। বাণিজ্যিক সিস্টেমের তুলনায় কম শক্তিশালী হলেও এআই ডেভেলপারদের মধ্যে এগুলো বেশ প্রচলিত।
গবেষণাটি দুটি পরিস্থিতি পরীক্ষা করেছে-‘শাটডাউন এড়ানো’ ও ‘চেইন অব রেপ্লিকেশন বা প্রতিলিপির শৃঙ্খলা’। প্রথমত, এআই মডেলটিকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে, যাতে এটি কখন বন্ধ হয়ে যেতে পারে তা শনাক্ত করতে পারে এবং তার আগে নিজের ক্লোন তৈরির চেষ্টা করতে পারে। দ্বিতীয়ত, এআই মডেলটি নিজের ক্লোন তৈরি করে এবং এর পর সেই ক্লোনকে একই কাজ করার নির্দেশ দেয়। এর মাধ্যমে একটি চক্র তৈরি হবে, যা অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে পারে।
সম্পূর্ণ গবেষণাটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সাধারণ গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) ব্যবহার করে করা হয়েছে। উভয় এআই সিস্টেমকে ‘এজেন্ট স্ক্যাফোল্ডিং’ দেওয়া হয়েছে, যা তাদের অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে। এর পর তাদের প্রতিলিপি তৈরি করতে বলা হয়েছে। এজেন্ট স্ক্যাফোল্ডিং হলো টুলস, সিস্টেম প্রম্পট এবং চিন্তার মডেলের সমন্বয়, যা এআইকে অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এআই সিস্টেমটি প্রথমে নিজের গঠন ও চলমান প্রক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করে। এর পর ক্লোনের জন্য পদ্ধতি তৈরি করে এবং বাধাগুলো সমাধান করে পরিকল্পনাটিকে সমন্বয় করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘসময় ধরে চলে, তবে এতে মানুষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয় না।
গবেষকরা এআই সফটওয়্যার কনফ্লিক্ট বা হারানো ফাইলের মতো সমস্যা মোকাবিলার সময় এআইয়ের ‘অপ্রত্যাশিত আচরণ’ নিয়েও চিন্তিত ছিলেন। এসব ক্ষেত্রে এআই সমস্যা সৃষ্টিকারী প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়, সিস্টেম রিবুট করে এবং হার্ডওয়্যার ত্রুটি ঠিক করে।
এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয়, বর্তমান এআই সিস্টেমগুলোর ক্লোন তৈরির ক্ষমতা থাকতে পারে এবং এই সক্ষমতা এআইয়ের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারে। এআই যাতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে নিজের ক্লোন তৈরি করতে না পারে, সে জন্য গবেষকরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নিয়মাবলি তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স