ডেস্ক রিপোর্ট
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!মঙ্গলপৃষ্ঠের অনেক গভীরে বিশাল পরিমাণ পানির অস্তিত্ব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার রোবট ইনসাইট ল্যান্ডারের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এই বিশাল পরিমাণ পানির অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা। গত ১২ আগস্ট এ বিষয়ে নাসার বিজ্ঞানীদের এক গবেষণাপত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস (পিএনএএস) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাপত্রটির বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে তা তুলে ধরেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বালা হয়েছে, এই পানি মঙ্গলের পৃষ্ঠতল থেকে প্রায় ১১ দশমিক ৫ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে অবস্থিত। পরিমাণে এতটাই বেশি যে, পৃথিবীর সমগ্র পৃষ্ঠতলজুড়ে এটি একটি মহাসাগর তৈরি করতে পারে।
গ্রহটির পৃষ্ঠতল থেকে এত গভীরে পৌঁছাতে যে ধরনের ড্রিলিং অপারেশন চালাতে হবে, সে রকম কিছু আজও পৃথিবীতে করা যায়নি। পৃথিবীতে খোঁড়া সবচেয়ে গভীর গর্ত হলো রাশিয়ার কোলা সুপারডিপ বোরহোল, যার গভীরতা প্রায় ১২ কিলোমিটার।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ অবস্থায় সূক্ষ্ম জীবনের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ অতীতে বা বর্তমানে সেখানে প্রাণের চিহ্ন থাকতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভাসান রাইট বলেন, ‘এই গভীরতায় শিলা যথেষ্ট গরম, যাতে পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারে। এর চেয়ে ওপরের স্তরে পানি বরফ হয়ে থাকবে।’
নাসার ইনসাইট ল্যান্ডার ২০১৮ সালে মঙ্গলে অবতরণ করে। এর প্রধান কাজ ছিল মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। এই মহাকাশযান ২০২২ সালে নিজের কাজ শেষ করেছে।
ভাসান রাইট বলেন, ‘ইনসাইট ভূকম্পন তরঙ্গের গতি পরিমাপ করেছে এবং গভীরতার সঙ্গে তার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করেছে। শিলা কী দিয়ে তৈরি, কোথায় ফাটল রয়েছে এবং সেই ফাটলে কী আছে, তার ওপর ভিত্তি করেই ভূকম্পন তরঙ্গের গতি নির্ভর করে।’
বিজ্ঞানীরা এই তথ্যের সঙ্গে মহাকর্ষীয় পরিমাপ এবং শিলা পদার্থবিজ্ঞানের মডেলও যোগ করেছেন। এই মডেলগুলো পৃথিবীতে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বা তেল-গ্যাসের অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মঙ্গলের বাইরের স্তর বা ক্রাস্টে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে তৈরি শিলায় ফাটল ধরে সেখানে পানি জমে আছে।
ভাসান রাইট বলেন, ‘মধ্যস্তরের শিলায় ফাটল ধরে তার মধ্যে পানি থাকার বিষয়টি ভূকম্পন ও মহাকর্ষীয় তথ্যের সঙ্গে ভালোভাবে মিলে যায়। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, ইনসাইট যেখানে অবস্থান করছিল সেখানকার অবস্থা মঙ্গলের সার্বিক অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে, তা হলে মধ্যস্তরের সব ফাটল থেকে পানি বের করে আনলে পুরো মঙ্গল গ্রহে প্রায় ১ থেকে ২ কিলোমিটার গভীর একটি মহাসাগর তৈরি করা সম্ভব।’
বর্তমানে মঙ্গলের পৃষ্ঠতল বরফাচ্ছাদিত মরুভূমি হলেও এক সময় এখানে উষ্ণ আবহাওয়া ও পানি ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গলের পৃষ্ঠতল থেকে যে পানি উধাও হয়েছে, তার বেশিরভাগই মহাকাশে যায়নি, বরং পৃথিবীর ভূগর্ভের মতো মঙ্গলের ক্রাস্টের ভেতরে গেছে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক গবেষক মাইকেল মাঙ্গা বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে মঙ্গলে নদী, হ্রদ, সম্ভবত মহাসাগরও ছিল। এমনও হতে পারে যে, মঙ্গলের সৃষ্টির শুরু থেকেই এর ক্রাস্ট পানি দিয়ে ভরা ছিল। পৃথিবীতে ভূগর্ভস্থ পানি পৃষ্ঠতল থেকে অনুপ্রবেশ করেছে। আমরা মনে করি, মঙ্গলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে সে সময় ওপরের স্তর এখনকার চেয়ে বেশি গরম ছিল।’
মানুষ যদি কখনো মঙ্গলে যায় অথবা সেখানে বসতি স্থাপন করে, তা হলে পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হবে। মঙ্গলের মেরু অঞ্চল ও ভূগর্ভস্থ কিছু জায়গায় বরফ আকারে পানি রয়েছে। তবে এবার পাওয়া পানি এত গভীরে রয়েছে যে, তা তোলা কঠিন হবে।
মাইকেল মাঙ্গা বলেন, ‘এই গভীরতা পর্যন্ত খনন করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। বিকল্প হিসেবে এমন জায়গা খুঁজে দেখা যেতে পারে, যেখানে ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপের ফলে এই পানি বের হয়ে আসে। উত্তর গোলার্ধের সের্বেরাস ফসায় (Cerberus Fossae) এমনটা হতে পারে। তবে মঙ্গলের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।’