ঝিনেদার কাগজ || Jhenedar kagoj || সত্যের আলোয় সুন্দর

২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কেউ আমাকে মূর্খ বা পাগল ভাবতে পারেন, আমি ঈশ্বরপ্রেরিত: মোদি

ডেস্ক রিপোর্ট

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ভারতের লোকসভা ভোট এবারের মতো আর কখনো এত রঙিন, এমন আলোচিত ও বিতর্কিত হয়ে ওঠেনি। শাসক দল ও বিরোধীদের মধ্যে আশার পেন্ডুলামও আগে কখনো এভাবে দোদুল্যমান হয়নি। বিরোধীদের হতবাক করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ভাষণের ভিন্নতা ও সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে কখনো এভাবে নিজেকে পাদপ্রদীপের সামনে হাজির করেননি। ভারতের কোনো রাজনৈতিক নেতাও কোনো দিন বলেননি, ‘আমি অবিনশ্বর।’

 

ভোট যত শেষের দিকে এগিয়েছে, নরেন্দ্র মোদি ততই নিজেকে ঈশ্বরপ্রেরিত দূত বলে জাহির করেছেন। একবার নয়, দুবার নয়, বারবার জনতাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘তিনি ঈশ্বর! তিনিই পরমাত্মা!’ তিনি বলেছেন, ‘কেউ আমাকে মূর্খ বা পাগল ভাবতে পারেন। কিন্তু আমি জানি, আমি ঈশ্বরপ্রেরিত।’

এবারের ভোট পর্ব শুরুর আগে জনপ্রিয় ধারণা ছিল, মোদি-মাহাত্ম্যের তোড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে বিরোধীরা। সেই ধারণা জনমনে গেড়ে দিতে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি শুরু করে দারুণ এক মনস্তাত্ত্বিক প্রচার—‘৪০০ পার’। প্রথমবারের ২৮২ ছাপিয়ে দ্বিতীয়বার ৩০৩ আসন পাওয়া মোদি তাঁর দলের নিজস্ব লক্ষ্য ৩৭০ আসন স্থির করে দেন। জোটের প্রাপ্তির সম্ভাব্য সংখ্যা করে তোলেন নির্বাচনী স্লোগান, ‘আগলি বার চার শ পার’। বিজেপি ভোট শুরুও করে সেই আশা আঁকড়ে। তুলনায় বিরোধীরা ছিল নিতান্তই নিষ্প্রভ।

 

অথচ প্রথম দফার ভোটের পরই ভোজবাজির মতো বদলে গেল চালচিত্র। যা ছিল নিস্তরঙ্গ দিঘি, তাতেই আচমকা ঢেউ তুলল বিরোধীকুল। দেশবাসীও অবাক হয়ে দেখল, প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বদলে দিলেন প্রচারের ঢং। তাঁর ভাষণ, ভাষণের বিষয়বস্তু, তাঁর শরীরী ভাষা, তাঁর বাচনভঙ্গি মুহূর্তের মধ্যে ভিন্ন খাতে বইতে শুরু করল। সেই বিচ্যুতি তাঁদের সম্ভাব্য স্খলনের শঙ্কাজনিত স্নায়ুবৈকল্য এবং সেই কারণে পরিচিত ‘হিন্দু-মুসলমান’ গাঙে অবগাহনের সিদ্ধান্ত কি না, শুরু হয় সেই বিচার।

 

কার্যকারণ যা-ই হোক, উন্নয়ন, প্রগতি ও উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখানো মোদির অবাক বিবর্তন বিরোধীদের জয় সম্পর্কে আশাবাদী করে তোলে। সেই প্রথম বোঝা গেল, এবারের লোকসভা ভোটের চরিত্র পুরোপুরি স্থানীয় ও আঞ্চলিক। কোনো বিশেষ বিষয় নিয়ে সব প্রদেশের মানুষ ভাবিত নয়। তাই, কোথাও ভোটের হাওয়া নেই। উদ্দীপনা নেই। টইটম্বুর উৎসাহ নেই। মোদির নামে জনপ্লাবন নেই। বরং মানুষ সরব বেকারত্ব নিয়ে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা নিয়ে।

 

এই উপলব্ধি কিন্তু আলোচনার অলিন্দ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে সরাতে পারেনি। বরং তাঁর ভাষণের ভিন্নতা হয়ে দাঁড়ায় মূল আকর্ষণ ও বিতর্কের আধার।

 

যেমন কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘মুসলিম লীগের ছোঁয়া’, কংগ্রেসের ‘অতিমাত্রায় মুসলমান প্রীতি’ নিয়ে মোদির মাত্রাছাড়া সরব হওয়া। এবং তা করতে গিয়ে কল্পনায় ভেসে ‘তুষ্টিকরণের’ আজগুবি ছবি আঁকা। কেমন ছবি? না, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করবে। সে জন্য ঘরে ঘরে একধরনের এক্স-রে মেশিন নিয়ে হানা দেবে। কারও ঘরে দুটি মহিষ থাকলে একটা কেড়ে নেবে। জমি, ঘরবাড়ি কেড়ে নেবে। এমনকি বিবাহিত মা-বোনেদের গলা থেকে পবিত্র মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে বিলিয়ে দেবে তাদের, যারা শুধু ‘কাঁড়ি কাঁড়ি বাচ্চা পয়দা করে’ও যারা ‘অনুপ্রবেশকারী’।

 

লড়াই জিততে এই প্রচার পুরোপুরি সাম্প্রদায়িকতায় গা ভাসানোর অভিযোগে মাখামাখি হলেও মোদি সেই চেনা রাস্তা থেকে সরে এলেন না। গত ১০ বছরের সাফল্যের খতিয়ান মেলে ধরার ঝুঁকিও নিলেন না। তাঁর মুখে অনবরত শোনা যেতে লাগল বিরোধীদের ‘সাম্প্রদায়িকতা’, তাদের ‘জাতিবাদী চরিত্র’, ‘পরিবারবাদী মানসিকতার’ নিদর্শন এবং পাঁচ বছরে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী পাওয়ার সাতকাহন।

 

পাঁচ দফার নির্বাচন সাঙ্গ হওয়ার পর প্রচারের একঘেয়েমিও কাটিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। নিজেকে এবার তিনি নবরূপে জাহির করলেন। বারানসির ঘাটে গঙ্গাপূজা সেরে দেশবাসীকে তিনি শোনালেন, জৈবিক মা গত হওয়ার পর মা গঙ্গা তাঁকে আশ্রয় দিয়েছেন। কোল পেতে দিয়েছেন।

 

ওইটুকুতেই কিন্তু মোদি থামেননি। গঙ্গাবিহারের সময় তিনি বলে, মায়ের মৃত্যুর পর উপলব্ধি করেছেন, হয়তো জৈবিকভাবে তাঁর জন্ম হয়নি। স্বয়ং ঈশ্বর নির্দিষ্ট কিছু কাজ করানোর জন্য তাঁকে ধরাধামে পাঠিয়েছেন, যা কিছু করানোর পরমাত্মাই তাঁকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছেন।

 

মোদির কথায়, ‘সমালোচকেরা, বামপন্থীরা হয়তো আমায় ছিঁড়ে খাবে। কিন্তু সত্য হলো, এই কাজের শক্তি কোনো জৈবিক দেহ থেকে উৎসারিত হতে পারে না। ঈশ্বরই আমাকে পাঠিয়েছেন। আমাকে দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য। আমি এক যন্ত্রমাত্র। যা কিছু আমি করছি, তা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী। তিনিই আমাকে দিয়ে সব করিয়ে নিচ্ছেন।’

 

কী সেই কর্তব্য? মোদি তার ব্যাখ্যাও দিতে ভোলেননি। ‘বিকশিত ভারত’। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বিকশিত করে তোলাই ঈশ্বরের ইচ্ছা। সেই কাজ শেষ করার আগে তাঁর মুক্তি নেই। তিনি চাইলেও মরতে পারবেন না।

 

অদ্ভুত ভাষণের জন্য নরেন্দ্র মোদি আলোচিত অনেক দিনই। কিন্তু তাতে তাঁর ভক্তের সংখ্যা কমেনি। জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী হয়নি। ২০১৯ সালে বালাকোটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর তিনি মেঘের সঙ্গে রাডারের সম্পর্কের ব্যাখ্যা করেছিলেন। বিমানবাহিনীকে বলেছিলেন, মেঘ ও বৃষ্টিতে সুবিধেই হবে। র‌াডারের চোখ এড়িয়ে কাজ হাসিল করা যাবে।

আরও পড়ুন

মিয়ানমারে লড়াইয়ের জন্য জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে লড়াইয়ের জন্য জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গারা

অনুবাদ রয়টার্স থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী বসতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস। ২০১৭ সালে বৌদ্ধ অধ্যুষিত মায়ানমার সরকার দেশটির

যবিপ্রবির ভিসি অধ্যাপক ড. এম মজিদের সংবর্ধণা কমিটির প্রস্তুতি সভা

হরিণাকুণ্ডুতে যবিপ্রবির ভিসি অধ্যাপক ড. এম মজিদের সংবর্ধণা কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

হরিনাকুণ্ড প্রতিনিধি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর বরেণ্য শিক্ষাবীদ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সলর অধ্যাপক ড. এমএ মজিদের সংবর্ধনা প্রদান কমিটির

মানুষের ভোটার অধিকার হরণ

‘মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি’

মোস্তাফিজুর রহমান, কোটচাঁদপুর মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি। ধর্ষণ সেঞ্চুরি করে উল্লাস করে এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি।

দরিদ্র মেধাবী ছাত্র নীরবের পাশে মানবতার হাত

দরিদ্র মেধাবী ছাত্র নীরবের পাশে মাও. আবু তালেব

বনি আমিন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ঝিনাইদহের মঙ্গলপৈতা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র সালমান ইসলাম নীরবের পড়াশোনার পথে দীর্ঘদিনের আর্থিক

কপ২৯: বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেল দরিদ্র দেশগুলো

কপ২৯: বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেল দরিদ্র দেশগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট দীর্ঘ দর-কষাকষির পর সমঝোতায় পৌঁছেছে কপ২৯। বিশ্বের ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে অভিযোজন