ডেস্ক রিপোর্ট
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!মুসলিম কমিউনিটি নেতা চৌধুরী মুঈন উদ্দিন কর্তৃক ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারির বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানি মামলায় যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট (প্রধান বিচারপতি) লর্ড রিড আদালতের পক্ষে এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মত ও যুগান্তকারী রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী চৌধুরী মুঈন উদ্দিন।
২০২৩ সালের ১-২ নভেম্বর এই মামলার শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি লর্ড রিডের নেতৃত্বে গঠিত ব্যাঞ্চে পাঁচজন জাস্টিসের মধ্যে আরো ছিলেন লর্ড সেইল্স, লর্ড হ্যামলেন্ড, লর্ড বারোজ ও লন্ড রিচার্ডস। ২০১৯ সালে মানহানি মামলার শীর্ষ ল ফার্ম কার্টার-রাকের মাধ্যমে চৌধুরী মুঈন উদ্দিন হোম অফিসের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন। তার আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র সলিসিটর অ্যাডাম টিউডর এবং কাউন্সেল জ্যাকব ডিন ও লিলি ওয়াকার-পার।
মামলার বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালে কমিশন ফর কাউন্টারিং এক্সট্রিমিজমের ‘চ্যালেঞ্জিং হেইটফুল এক্সট্রিমিজম’ বিষয়ক ব্রিটিশ হোম অফিসের রিপোর্টে চৌধুরী মুঈন উদ্দিনকে এক্সট্রিমিজমের সাথে জড়িত বলে অভিযুক্ত করা হয়। এতে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইসিটি মামলার রায়কে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এই রিপোর্টের জন্য চৌধুরী মুঈন উদ্দিন ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারির বিরুদ্ধে মানহানি মামলায় উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোনো রকম মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে তিনি জড়িত নন। বরং বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উল্লেখ করা হয়, চৌধুরী মুঈন উদ্দিন ১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলায় জন্মগ্রহণ করেন, যা তখন পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭৩ সাল থেকে চৌধুরী মুঈন উদ্দিন যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং ১৯৮৪ সাল থেকে একজন ব্রিটিশ নাগরিক। এই সময়ে তিনি ব্রিটেনে বেশ কয়েকটি সামাজিক ও দাতব্য সংস্থায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
নাগরিক সমাজে উল্লেখযোগ্য অনেক ভূমিকার মধ্যে তিনি কাউন্সিল অব মস্ক ইউকে অ্যান্ড আয়ারের সেক্রেটারি জেনারেল এবং ব্রিটিশ মিনিস্ট্রি অব হেলথের ‘মুসলিম স্পিরিচুয়াল কেয়ার প্রভিশন ইন দ্য এনএইচএস’ প্রকল্পের ডাইরেক্টর ছিলেন।
তিনি যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা মুসলিম এইডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ-সহ ৯টা ধর্মের সমন্বয়ে গঠিত মাল্টি ফেইথ গ্রুপের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রায়ে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়, চৌধুরী মুঈন উদ্দিন আইসিটি মামলার সময় পর্যন্ত দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে বিলেতে মুক্তভাবে চলাফেরা করেছেন। তার ঠিকানা বাংলাদেশ সরকারের জানা ছিল। এক্ষেত্রে আইসিটি মামলায় তাকে পলাতক বা আত্মগোপনে থাকার কথাটা সঠিক নয়।
রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪০ বছরেরও বেশি সময় পরে ২০১৩ সালে চৌধুরী মুঈন উদ্দিনের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের একটি আদালত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ (আইসিটি) দ্বারা ১৯৭১ সালের যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
আইসিটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে অপরাধ প্রমাণের পরিবর্তে ঘটনার সময়ে যারা শিশু ছিল এমন সাক্ষী, শোনা কথা ও সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে রায় প্রদান দেয়। ফলে সর্বজনীনভাবে জাতিসঙ্ঘ, ইইউসহ মানবাধিকার সংস্থা ও আইনি প্রতিষ্ঠান আইসিটিকে ন্যায়বিচারের মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য নিন্দা জানায়।
রায়ে বলা হয়, প্রশ্নবিদ্ধ আইনি প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে চৌধুরী মুঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা একটি রেড নোটিশ প্রত্যাহার করেছে ইন্টারপোল।
হোম সেক্রেটারি চৌধুরী মুঈন উদ্দিনের দাবিকে খারিজ করে দেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করে বলেছিলেন, এটি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার মাত্র। বলা হয়েছিল যে চৌধুরী মুঈন উদ্দিনের মানহানির দাবিটি ব্রিটিশ হাইকোর্টে গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া বাংলাদেশে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে রায়ের কারণে তার খ্যাতি ইতোমধ্যেই আর নেই।
কিন্তু হোম অফিসের এই দাবি আদালত গ্রহণ করেননি। বরং উল্লেখ করেন যে. আইসিটির রায়ের পরও তিনি ব্রিটেনের বর্তমান রাজা তৎকালীন প্রিন্স চার্ল্সের সাথে কয়েকবার সাক্ষাৎ করেছেন। তৎকালীন রানীর গার্ডেন পাটি ও বাকিংহাম প্রাসাদে আমন্ত্রিত হয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট হোম সেক্রেটারির দাখিল করা বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রধান বিচারপতি লর্ড রিড পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন, ‘যেকোনো ব্যক্তির জন্য আদালতে প্রবেশের মৌলিক অধিকার তাদের নাগরিক অধিকার হিসেবে নির্ধারিত। সে অধিকার স্বীকৃত হয়েছে বহু শতাব্দী ধরে সাধারণ আইন এবং ম্যাগনা কার্টা থেকে, যা মানবাধিকার আইন ১৯৯৮ পর্যন্ত সংবিধি দ্বারা সুরক্ষিত।